বানিজ্য

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে একদিনে নেপালে রফতানি ৫৯০ টন পাট ও ৮৪ টন আলু

Advertisement

দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সম্প্রতি দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে নেপাল সহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে কৃষিপণ্য রফতানিতে এই বন্দরের অবদান ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত রোববার (৩১ আগস্ট) একদিনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ৫৯০ মেট্রিক টন পাট এবং ৮৪ মেট্রিক টন আলু নেপালে রফতানি করা হয়েছে। এটি শুধু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্যই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পঞ্চগড় জেলার একটি কৌশলগত স্থলবন্দর। এটি মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যবর্তী বাণিজ্যিক পথে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি, এই বন্দরকে চতুর্দেশীয় বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে নেপাল পর্যন্ত পাট ও আলুর রফতানি বৃদ্ধির পেছনে বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত উদ্যোগ এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় ভূমিকার অবদান রয়েছে।

রফতানিতে সরাসরি অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একদিনে যে পরিমাণ পাট রফতানি হয়েছে, তাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান সরাসরি অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • মেসার্স আব্দুল করিম এন্টারপ্রাইজ
  • মেসার্স রাসেল এন্টারপ্রাইজ
  • মেসার্স তাসফিয়া জুট ট্রেডিং
  • মেসার্স বালাজি এন্টারপ্রাইজ
  • মেসার্স সুবল কুমার সরকার
  • আসিবা জুট ইন্টারন্যাশনাল
  • মেসার্স ম্যাক্সি জুট
  • বগুড়া জুট মিল লিমিটেড

এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতভাবে নেপালে পাট রফতানি করছে এবং স্থলবন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষিপণ্য বাজারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

পাট ও আলুর রফতানির পরিসংখ্যান

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে এখন পর্যন্ত নেপালে পাটের রফতানি হয়েছে মোট ১৮,৬৪৩ মেট্রিক টন। আর আলুর রফতানি হয়েছে মোট ২৪,৮৪৩ মেট্রিক টন

এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের কৃষিপণ্য বিদেশী বাজারে ক্রমেই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। বিশেষ করে পাট এবং আলু, যা নেপালের বাজারে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য।

কোয়ারেন্টিন ও মান নিয়ন্ত্রণ

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংরক্ষণ কেন্দ্রের কোয়ারেন্টিন পরিদর্শক উজ্জল হোসেন বলেন, “আমরা প্রতিটি চালান পরীক্ষা করি যাতে কৃষিপণ্যের মান ও গুণগত মান বজায় থাকে। নিরাপদ ও সুস্থ পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য। এটি কেবল রফতানির জন্য নয়, দেশের কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক মানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।”

উজ্জল হোসেন আরও জানান, যে পাট এবং আলু রফতানি করা হয়েছে তা কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বিদেশী বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি ও প্রত্যাশা

বাংলাবান্ধা আমদানী-রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক রেজাউল করিম শাহীন বলেন, “বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সহযোগিতা থাকলে আমরা এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে পারব।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নেপালের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী দিনে আরও নতুন পণ্য রফতানির মাধ্যমে বন্দরটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ভূমিকা

বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেড-এর ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, “বাংলাবান্ধা এখন চতুর্দেশীয় বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আমরা প্রতিদিনই রফতানি কার্যক্রম তদারকি করছি, যাতে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, “এই বন্দরের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধির ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং দেশের সামগ্রিক রফতানিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বন্দরের সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে পাট ও আলুর রফতানি আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুধু নেপাল নয়, ভারতের অন্যান্য অংশেও কৃষিপণ্য রফতানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের স্থলবন্দর কার্যক্রম দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটি কৃষক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করে।

সারাদেশে কৃষিপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ

বাংলাদেশ সরকার কৃষি ক্ষেত্রে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এছাড়াও, কৃষকরা বিদেশী বাজারে সরাসরি পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন এবং মধ্যস্বত্তা হ্রাস পাচ্ছে। পাট ও আলুর মতো পণ্যের জন্য এটি নতুন বাজার সৃষ্টি করছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুধু পঞ্চগড় বা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য নয়, পুরো দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একদিনে ৫৯০ মেট্রিক টন পাট ও ৮৪ মেট্রিক টন আলুর রফতানি প্রমাণ করছে, দেশের কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমেই গ্রহণযোগ্য হচ্ছে।

নেপালের বাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে আরও বড় রফতানি কার্যক্রম সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার, ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দেশের রফতানি বাজারে নতুন দিগন্ত খুলতে চলেছে।

MAH – 12588,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button