গাজার আকাশে ইসরায়েলি ড্রোনের বোমার শব্দ ফিলিস্তিনিদের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই মানসিক চাপের কারণ। এই ভয়াবহ শব্দগুলো থেকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাজার সংগীত শিক্ষক আহমেদ আবু আমশা এক অভিনব উপায় বের করেছেন। তিনি বোমার শব্দগুলোকে গিটার ব্যবহার করে গানে রূপান্তর করছেন।
আবু আমশা বলেন, “যখন আমরা এই শব্দগুলো শুনি, বিশেষ করে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন আমি তাদের বলি, এই শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে গান গাও, শব্দগুলো আর ভীতিকর মনে হবে না।”
সৃজনশীল প্রতিরোধের উদ্যোগ
আবু আমশার মতে, এটি শুধুমাত্র সংগীত নয়, এটি একটি মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। শব্দগুলোকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করে গান তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা ভয়াবহ শব্দগুলোকে সুন্দর কিছুতে রূপান্তর করতে চাই। এটি শিশুদের ও সাধারণ মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।”
তিনি তার রেকর্ড করা গানগুলো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বহু মানুষ মন্তব্য করেছেন, এটি শুধু শিল্প সৃষ্টি নয়, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেরও একটি রূপ।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি
৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৩,৩৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এই পরিস্থিতি সাধারণ নাগরিকদের জীবনে বিশাল মানসিক প্রভাব ফেলেছে। ড্রোন ও বোমার শব্দ চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যা শিশু ও প্রবীণদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
সংগীত শিক্ষকের পদ্ধতি
আবু আমশা বোমার শব্দগুলোকে একটি রিদম বা ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। তার ছাত্ররা এই রিদমের সঙ্গে মিলিয়ে গিটার বাজায় এবং গান গায়। এটি শুধুমাত্র ভয় দূর করে না, বরং সৃজনশীলতা ও সংগীত শিক্ষার নতুন দিকও উন্মোচন করে।
তিনি বলেন, “শিশুরা যখন এই গানগুলো গায়, তারা ভয়কে শক্তিতে পরিণত করে। এটি তাদের মনোবল ও মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়।”
সামাজিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
গাজার সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। শিশু ও তরুণরা আবু আমশার শিক্ষণ পদ্ধতিকে সৃজনশীল ও কার্যকর মনে করছেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওগুলো শেয়ার করা হচ্ছে। কমেন্টে মানুষ লিখেছেন, এটি যুদ্ধের ভীতিকর বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটি অভিনব উপায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এটি একটি অনন্য উদাহরণ যেখানে সংগীতকে মানসিক চাপ কমানো এবং সামাজিক সচেতনতার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। গাজার এই শিশু ও তরুণরা শুধুমাত্র সংগীত শিখছে না, তারা মানসিক শক্তি ও সহমর্মিতা বিকাশ করছে।”
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গাজার এই সৃজনশীল উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, যুদ্ধ ও সংঘাতের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল প্রতিরোধের উদাহরণ বিশ্বের অন্যান্য এলাকায় শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
গাজার সংগীত শিক্ষক আহমেদ আবু আমশার উদ্যোগ প্রমাণ করে, সংগীত শুধু বিনোদন নয়, বরং এটি মানসিক প্রশান্তি, সামাজিক প্রতিরোধ এবং শিশুদের সৃজনশীল বিকাশের এক শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। ড্রোন ও বোমার শব্দকে গান ও সৃজনশীলতা হিসেবে রূপান্তরিত করার এই উদ্যোগ মানবতার উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
এম আর এম – ১১০২, Signalbd.com



