আসন্ন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সরকারি ছুটির তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত ৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) নতুন ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরকারি ছুটির তারিখ পরিবর্তনের ঘোষণা
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর সরকারি ছুটির তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, চলতি বছর ২৬ আগস্ট থেকে রবিউল আউয়াল মাস শুরু হয়েছে। সেই হিসেবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে। ফলে ৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ৬ সেপ্টেম্বর ছুটি কার্যকর হবে।
আগের সিদ্ধান্ত
প্রথমে সরকার ৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখার তথ্য ও ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, প্রকৃত তারিখ ৬ সেপ্টেম্বরের সঙ্গে মিলে। তাই পূর্বের ঘোষণাটি সংশোধন করে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে ঈদ ও অন্যান্য ধর্মীয় দিবসের ছুটি নির্ধারণ করা হয়। চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের তারিখ প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। অতীতেও একাধিকবার রমজান, ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আজহার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
কোন কোন প্রতিষ্ঠান ছুটির আওতায় থাকবে
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, দিনটিতে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থাও সাধারণত এ ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বন্ধ থাকে।
তবে জরুরি পরিষেবার আওতাভুক্ত খাতগুলো যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা, হাসপাতাল, চিকিৎসাসেবা, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এসব খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যানবাহন ও কর্মীরাও ছুটির বাইরে থাকবেন।
এছাড়া ব্যাংক খোলা থাকবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট থেকে আসবে।
ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। দিনটি বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশেও প্রতি বছর এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন আলোচনা সভা, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। পাশাপাশি মসজিদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ খুতবা প্রদান করা হয়। সরকারি ছুটি ঘোষণার ফলে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী দিনটি আরও সহজে পালন করতে পারেন।
পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ছুটির তারিখ পরিবর্তনের ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, সঠিক তারিখে দিবসটি পালনের সুযোগ তৈরি হলো।
অন্যদিকে, যারা ৫ সেপ্টেম্বর ছুটি ধরে ব্যক্তিগত পরিকল্পনা বা ভ্রমণের সময়সূচি করেছিলেন, তাদের জন্য এ পরিবর্তন কিছুটা অসুবিধা তৈরি করেছে। বিশেষ করে সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রুটিনে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। তবে সাধারণ জনগণ মনে করেন, ধর্মীয় দিবসের সঠিক সময়ে ছুটি হওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতামত
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিন-তারিখ পরিবর্তন হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশসহ মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে প্রতি বছরই এ ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধর্মীয় দিবসের ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি থাকলে তা দ্রুত সমাধান করা জরুরি। কারণ, ধর্মীয় সংবেদনশীল বিষয়ের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্বের অংশ।
পরিশেষে
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সরকারি ছুটির তারিখ পরিবর্তনের ঘোষণা আসন্ন দিনটির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী ৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সারাদেশে ছুটি পালিত হবে।
এখন দেখা যাক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠন কীভাবে দিবসটি উদযাপন করে এবং জনগণ এ ছুটি কীভাবে কাজে লাগায়। তবে এক কথায় বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত মুসলিম সম্প্রদায়কে সঠিক তারিখে মহানবীর জন্ম ও ওফাত দিবস পালনের সুযোগ করে দিয়েছে।
এম আর এম – ১০৮১, Signalbd.com



