গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কড্ডা এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ধাওয়া খেয়ে আমজাদ হোসেন (৩২) নামে এক বালু ব্যবসায়ী তুরাগ নদে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালালেও এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
ঘটনার বিস্তারিত
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কড্ডা এলাকায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেছিলেন বালু ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন। এ সময় একটি মাইক্রোবাসে করে ৭-৮ জন ব্যক্তি এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চারপাশ ঘিরে ফেলে। তাকে আটক করার চেষ্টা করলে আমজাদ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
পেছন থেকে ধাওয়া করা হলে তিনি সরাসরি তুরাগ নদে ঝাঁপ দেন। পরে ধাওয়া করা ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে স্বজন ও এলাকাবাসী রাতভর নদে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাননি। পরদিন সকালে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধারে নামে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্বজনদের অভিযোগ
নিখোঁজ ব্যবসায়ীর বাবা ইদ্রিস আলী অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। তারপরও বিভিন্ন সময় ডিবি পুলিশ তাকে বিরক্ত করতো। গতকালও তারা ধরতে আসলে আমার ছেলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে আর তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
পরিবারের অন্য সদস্যরা দাবি করেছেন, আমজাদকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করা হচ্ছিল। এমনকি স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি তাকে ধরে টাকার দাবি করার ঘটনাও ঘটে। এ কারণে স্বজনরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।
উদ্ধার তৎপরতা
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, সকাল থেকে ডুবুরি দল তুরাগ নদে তল্লাশি চালাচ্ছে। স্রোত ও পানির গভীরতার কারণে উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যবসায়ীর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের প্রধান মো. ইদ্রিস আলী বলেন, “আমরা সকাল থেকে নিরলস চেষ্টা করছি। নদীতে স্রোত বেশি থাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছি। তবুও আমরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”
পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য
বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দুলাল চন্দ্র জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় লোকজনের ধাওয়া খেয়ে আমজাদ নদীতে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থল কোনাবাড়ী থানার অন্তর্গত হওয়ায় তারা বিষয়টি তদন্ত করছে।
অন্যদিকে কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার থানায় এসে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। কারা তাকে ধাওয়া করেছিল তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজীপুর ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. আমির হোসেন বলেন, কড্ডা এলাকায় নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল নিয়মিত টহলে থাকে। ঘটনার সময় এক ব্যক্তি তাদের গাড়ি থেকে পালিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, হঠাৎ করে এভাবে কাউকে ধাওয়া করলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে দেখছি, ডিবির নামে লোকজন এসে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। যদি সত্যিই পুলিশ হয়ে থাকে তবে তাদের উচিত ছিল আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, এভাবে তাড়া করা নয়।”
নিখোঁজ ব্যবসায়ীর পারিবারিক অবস্থা
নিখোঁজ আমজাদ হোসেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাঠালিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে একজন প্রভাবশালী যুবক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি কখনোই কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তার হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় পরিবারসহ এলাকাবাসী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে।
ভবিষ্যৎ করণীয় ও উদ্বেগ
স্বজনরা দ্রুত আমজাদের সন্ধান এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। এদিকে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি উঠছে।
ঘটনার সত্যতা প্রমাণে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, যদি ঘটনাটি সত্যিই ডিবি পুলিশের হয়রানির কারণে ঘটে থাকে, তবে এটি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো এলাকার জন্য উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে।
এম আর এম – ১০৭৮, Signalbd.com



