চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২৭ দিনে দেশে এসেছে ২০৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। গত বছরের তুলনায় এই আয়ে বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের আয় প্রেরণের এই ধারা অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভবিষ্যতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ।
আগস্টে প্রবাসী আয়ের চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথম ২৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৮ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে প্রায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। কেবল ২৭ আগস্টেই দেশে এসেছে ৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স, যা চলতি মাসের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ প্রবাহ।
গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে এই আয় বেড়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রেক্ষাপট
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত (জুলাই–আগস্ট) দেশে এসেছে ৪৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
শুধু জুলাই মাসেই দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ২২ কোটি ৯২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
রেমিট্যান্সে অতীতের রেকর্ড
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনোত্তর বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই আয়ের ধারা ত্বরান্বিত হয়েছে।
অর্থনীতিতে প্রভাব
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস। আগস্ট মাসে এই প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রিজার্ভে চাপ থেকে যাবে। পাশাপাশি, হুন্ডি বা অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর প্রবণতা কমানো না গেলে এই ধারা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী করা কঠিন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. আনোয়ারুল হক বলেন, “প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। এর সুফল এখন দেখা যাচ্ছে। তবে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের সেবায় আরও নজর দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কেবল স্বল্পমেয়াদে প্রবাহ বাড়ানো যথেষ্ট নয়। কর্মসংস্থানের নতুন বাজার খুঁজে বের করা, প্রবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং সেবায় সহজতা আনতে পারলেই রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও টেকসই হবে।”
তুলনামূলক বিশ্লেষণ
গত বছরের আগস্টে দেশে এসেছিল প্রায় ১৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। আর চলতি আগস্টে এসেছে ২০৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ১১ কোটির বেশি ডলার প্রবাহ বেড়েছে।
শুধু তা-ই নয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই–আগস্ট মিলিয়ে ৪৫৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৮ কোটি ডলার বেশি। এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনছে।
সরকারের উদ্যোগ
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রবাসীদের জন্য ২.৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। একইসঙ্গে হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থা আরও সহজ করা হবে। প্রবাসীরা যেন দ্রুততম সময়ে টাকা দেশে পাঠাতে পারেন, সে দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অর্থনীতিবিদদের ধারণা, রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি বর্তমান গতিতে অব্যাহত থাকে, তবে চলতি অর্থবছরেও নতুন রেকর্ড গড়তে পারে। এতে দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় মেটানো সহজ হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে রেমিট্যান্স আয় ধরে রাখতে প্রবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন শ্রমবাজার তৈরি এবং প্রবাসী কল্যাণে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।
উপসংহার
আগস্ট মাসের প্রথম ২৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৮ কোটি ডলার। এটি একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিলেও অন্যদিকে এটি ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকারি উদ্যোগ, প্রবাসীদের শ্রম এবং বৈশ্বিক শ্রমবাজারের অবস্থা—এই তিনটির ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতের রেমিট্যান্স প্রবাহ। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি আগের মতো ধারাবাহিকভাবে এই আয় বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে?
এম আর এম – ১০৭৭, Signalbd.com



