অর্থনীতি

ঝিনাইদহে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় চুরি, উধাও ১.২৫ লাখ টাকা

Advertisement

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় চুরির ঘটনায় পুরো এলাকা সাড়া ফেলে। দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে ভল্ট ভেঙে নগদ ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫৯ টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। এ সময় ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্কও তারা সঙ্গে নিয়ে গেছে, যা ঘটনার প্রমাণ ধ্বংসের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনার সূত্র অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে ব্যাংকের কর্মচারীরা ব্যাংক খোলার পর চুরির বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চুরির ঘটনা রাতের কোনো এক সময় ঘটেছে।

ব্যাংকের অবস্থান ও চুরির পদ্ধতি

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাটি গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মসজিদের পাশের মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। ব্যাংক ভবনের পিছনের দিকে মই ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করেছে। এরপর ভল্ট ভেঙে নগদ টাকা ও সিসিটিভি ডিভাইসটি চুরি করে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, “এ এলাকায় আগে কখনো এমন চুরি হয়নি। রাতের অন্ধকারে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় স্থানীয়রা ভীত।”

পুলিশি পদক্ষেপ ও তদন্তের বিষয়বস্তু

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা চুরির খবর পেয়েছি। ব্যাংকের ভল্টের তালা ভেঙে নগদ টাকা ও সিসিটিভি হার্ডডিস্ক চুরি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খতিয়ান, স্থানীয় গ্যাং বা চোরচক্রের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ এবং চুরির সময়ের হদিস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়াও, ব্যাংকিং এজেন্ট এবং আশেপাশের ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হবে।

চুরি হওয়া টাকার পরিমাণ ও প্রভাব

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, চুরি হওয়া টাকার পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫৯ টাকা। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এ ধরনের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় নগদ লেনদেন বেশি হয় না, তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থের উৎস। এই চুরি স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় নিরাপত্তার খামতি থাকলে দুর্বৃত্তরা সহজেই এমন চুরি করতে পারে। সিসিটিভি হার্ডডিস্ক চুরি হলে তদন্তের প্রমাণ ধ্বংস হয়ে যায়, যা অপরাধীকে ধরার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বলেছেন, “এ এলাকায় রাতে রোজকার মতো নিরাপত্তা কম থাকে। ব্যাংক এবং আশেপাশের দোকানগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করতে হবে।” একজন স্থানীয় বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমাদের সবার জন্য সতর্কবার্তা। ব্যাংকিং লেনদেনে নিরাপত্তা এবং নজরদারি বাড়ানো জরুরি।”

দেশের অন্যান্য জেলায় এ ধরনের চুরি

বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যাংক চুরি নতুন নয়। বিশেষ করে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা বা ছোট শাখাগুলোতে নিরাপত্তার অভাবের সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা চুরি করে থাকে। গত বছর সারাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের ছোট শাখায় এ ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে।

উদাহরণ হিসেবে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে কয়েকটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় রাতে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। সাধারণত, অপরাধীরা রাতের অন্ধকারে বা ছুটির দিনে এ ধরনের কাজ করে। চুরি হওয়া নগদ অর্থ এবং সিসিটিভি হার্ডডিস্ক ধ্বংসের ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেয়।

ব্যাংকিং সুরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব

বর্তমান যুগে ব্যাংকিং সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাগুলি গ্রাহকের নগদ অর্থ সংরক্ষণ ও লেনদেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন সিসিটিভি, ভল্টের মান, গেট গ্রিল এবং নিরাপত্তা প্রহরী থাকা অত্যাবশ্যক।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাগুলোতে কমপ্যাক্ট ভল্ট এবং আধুনিক সিসিটিভি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। পাশাপাশি, স্থানীয় পুলিশ ও ব্যাংকের মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় এ ধরনের অপরাধ কমাতে সাহায্য করে।”

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

ঝিনাইদহ পুলিশ ও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই স্থানীয় নজরদারি বাড়াতে এবং চোরচক্র শনাক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ পুনঃস্থাপন, স্থানীয় গ্যাং ও সন্দেহভাজনদের তথ্য সংগ্রহ এবং এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে।

বিভিন্ন ব্যাংক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন যে, এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে। এজন্য ব্যাংক শাখার নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করার পাশাপাশি, স্থানীয় কমিউনিটির সহযোগিতায় নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের এই চুরির ঘটনা শুধু ইসলামী ব্যাংক বা শাখার জন্য নয়, পুরো এলাকা ও গ্রাহক সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করা হলে এ ধরনের চুরি ভবিষ্যতে আরও জটিল আকার নিতে পারে। ব্যাংকিং এজেন্ট ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, আধুনিক সিসিটিভি ব্যবহার, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।

সিসিটিভি হার্ডডিস্ক চুরি এবং নগদ অর্থ লোপ পাওয়ার ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত হলেও, প্রশাসনের তৎপর পদক্ষেপ আশা জাগাচ্ছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়ে এবং ব্যাংকিং সিস্টেমে নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।

MAH – 12526 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button