রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন এবং আরও দুজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট ২০২৫) ভোর ৫টার কিছু পরে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনের ইউটার্নে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরের নীরব সড়কে হঠাৎ করেই একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ইউটার্ন নেওয়ার চেষ্টা করছিল। ঠিক সেই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পণ্যবাহী লরি দ্রুতগতিতে এসে সিএনজির সাথে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় সিএনজিটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সিএনজির এক যাত্রীকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তির নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এদিকে, সিএনজির চালক এবং অন্য যাত্রীও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চিকিৎসকের মন্তব্য: আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, আহত দুজনের অবস্থাও গুরুতর। তাদের মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর যানজট, স্বাভাবিক হতে সময় লাগে
দুর্ঘটনার কারণে কুর্মিটোলার আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। প্রায় ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুমড়ে যাওয়া সিএনজিটি সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ: ইউটার্ন পয়েন্টের ঝুঁকি
বাংলাদেশের সড়কগুলোতে ইউটার্ন পয়েন্টগুলো সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে অবস্থিত এই ইউটার্নে নিয়মিত যানবাহন চলাচল করে এবং সঠিক সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউটার্ন নেওয়ার সময় অধিকাংশ সিএনজি ও প্রাইভেটকার চালকরা গতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন না, আবার পণ্যবাহী লরিগুলো অতিরিক্ত গতিতে চলাচল করে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-র তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা শহরেই ইউটার্ন পয়েন্টে সড়ক দুর্ঘটনার হার প্রায় ১৭%, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি ভয়াবহ সমস্যায় রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৬,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায়।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউটার্ন এবং মোড়েই ঘটে প্রায় ৩০% দুর্ঘটনা। এর প্রধান কারণ গতি নিয়ন্ত্রণের অভাব, ট্রাফিক আইন না মানা, সঠিক সিগন্যালিং না থাকা এবং চালকদের অসতর্কতা।
বিশেষজ্ঞ মতামত: সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি:
✔ ইউটার্ন পয়েন্টে সিগন্যাল লাইট স্থাপন
✔ গতিনিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিড ব্রেকার
✔ নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি
✔ চালকদের জন্য নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ
✔ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি
সরকারি উদ্যোগ: কি করা হচ্ছে?
সরকার সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম চালু করা
গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল স্পিড মনিটরিং
সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প
ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাগজে-কলমে প্রকল্প থাকলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্ঘটনার হার কমছে না।
জনগণের করণীয়
প্রতিটি নাগরিকের উচিত ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং সতর্কভাবে গাড়ি চালানো। বিশেষ করে ইউটার্ন, সিগন্যাল ও মোড়ে গতি নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা জরুরি।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া আজকের ভয়াবহ দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—ঢাকার সড়কগুলো এখনও নিরাপদ নয়। প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনগণের সচেতনতা। না হলে প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রাণ সড়কে ঝরে পড়বে।
MAH – 12521 , Signalbd.com



