বুয়েট শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করার সাহস কোথায় পায় প্রশাসন – প্রশ্ন সারজিসের
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের পুলিশের হাতে রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাহস প্রশাসন কীভাবে পায়। তিনি আরও বলেন, সকল প্রকার কোটার বিরুদ্ধে এবং যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার তাদের অবস্থান অটল।
ঘটনা ও প্রশাসনের আচরণ
সারজিস আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে মন্তব্য করেন, “পুলিশকে দিয়ে যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদেরকে রক্তাক্ত করার সাহস এই প্রশাসন কোথায় পায় সেই জবাব তাদেরকে দিতে হবে।” তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।
প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষাগত দাবিতে আন্দোলনে নামে। তবে চলতি বছরের এই ঘটনায় পুলিশের হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কাঠামো ভেঙে পুলিশি সহিংসতা নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলন
বুয়েট শিক্ষার্থীরা মূলত শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, কোটা সংস্কার এবং অন্যান্য সামাজিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রাস্তায় সমাবেশ করে, শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করে এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রতি দাবি উপস্থাপন করে।
এই ধরনের যৌক্তিক দাবিতে পুলিশি হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও সামাজিক উদ্বেগ বাড়ায়। সারজিস আলম বলেন, “যেকোনো যৌক্তিক দাবিতে এবং সকল প্রকার কোটার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় জারি থাকবে। শিক্ষার্থীদের উপরে হামলায় যারা জড়িত তাদের ধিক্কার জানাই।”
প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা
পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীদের উপর কৌশলগতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে চলতি ঘটনার মতো সহিংস হস্তক্ষেপ শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর উচিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সমর্থন করা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গত কয়েক বছরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় পুলিশি হস্তক্ষেপে বেশ কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে চলতি বছর বুয়েটের ঘটনা প্রশাসনের সমালোচনা আরও তীব্র করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তারা বলছে, শিক্ষার্থীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তখন তাদের উপর সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সারজিস আলমের মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং প্রশাসনের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ করা আমাদের সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।”
বিশ্লেষণ
শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের সহিংসতা শুধু একাডেমিক বা প্রশাসনিক ইস্যু নয়, এটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করছে, তখন তাদের নিরাপত্তা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা প্রশাসনের নৈতিক কর্তব্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সহিংস প্রতিক্রিয়া দেশের শিক্ষামূলক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া সামাজিক আন্দোলনের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের বিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পায়।
পরিশেষে
বুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হস্তক্ষেপের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন বা বিরোধ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সারজিস আলমের মন্তব্য একদিকে প্রশাসনের নীতি ও আচরণের প্রশ্ন তোলে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে।
এম আর এম – ১০৬৮, Signalbd.com



