আঞ্চলিক

কুষ্টিয়া আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ পাপ্পু গ্রেপ্তার

Advertisement

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিক্ষার্থী আন্দোলন ও জনসমর্থিত বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়া ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৭ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে তাকে কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালতে প্রবেশের সময় পাপ্পু এবং তার সমর্থকরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। যদিও পুলিশ এ সময় কোনো নেতাকর্মীকে আটক করতে সক্ষম হয়নি, কারণ তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারের পটভূমি

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরহাদ হোসেন পাপ্পু (২৬) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এলঙ্গি এলাকার মতি হোসেনের ছেলে। তিনি কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। পাপ্পুর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান জানান, “ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের নিচতলায় এই ঘটনা ঘটে। আদালতে নিয়ে আসার সময় পুলিশ ভ্যান থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে পাপ্পু ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। তার সঙ্গে প্রায় ১০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীও স্লোগান দিতে দিতে দ্রুত আদালতের নিচতলায় প্রবেশ করেন। পুলিশের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং আদালতের সূত্রে জানা গেছে, পাপ্পু উচ্চস্বরে স্লোগান দেন এবং তার সমর্থকরা তার সঙ্গে স্লোগান দিয়ে চলাফেরা করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বিস্তারিত

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কুমারখালীর এলঙ্গি এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিহাদ শাহরিয়ার সুমন নামে একজন শিক্ষার্থী কুমারখালী থানায় মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় ৯২ জনকে আসামি হিসেবে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১৫ জনকে। এই মামলায় ফরহাদ হোসেন পাপ্পু ছিলেন তিন নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা শিক্ষার্থীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আদালত ও আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পাপ্পুর গ্রেপ্তারের পর তার উপস্থিতি নিয়ে কিছু আইনজীবী এবং সংবাদকর্মী আদালতে ছিলেন। যদিও কুষ্টিয়া কোর্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। তবে কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “পাপ্পুকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে এবং তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। আমরা আইনের যথাযথ প্রয়োগ করছি।”

প্রভাব এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া

কুষ্টিয়া জেলায় এ ধরনের ঘটনা সামাজিকভাবে আলোচিত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক সহিংসতা শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পাপ্পুর গ্রেপ্তারের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা স্পষ্টভাবে শিক্ষার্থীদের আচরণে প্রভাব ফেলে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, কেন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটছে এবং এই ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

পুলিশের ভূমিকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের সময় পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। পুলিশের মতে, অভিযুক্ত এবং তার সমর্থকরা স্লোগান দিলেও কোনো অশান্তি তৈরি হয়নি। আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তভাবে করা হয়েছিল।

ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, “আমরা নিশ্চিত করেছি যে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে। গ্রেপ্তারের সময় কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণভাবে অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা।”

ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া সহিংসতা

জুলাই আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে সহিংসতা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আন্দোলন দমন করতে কিছু রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয় এবং স্থানীয় জনসাধারণ আতঙ্কিত হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ধরনের সহিংসতার ঘটনাগুলো তদন্তের আওতায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তার কার্যক্রম এবং আদালতের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া আগামী দিনে এমন সহিংসতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

  • গ্রেপ্তারকৃত ফরহাদ হোসেন পাপ্পু কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।
  • তাকে জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
  • আদালতে উপস্থিতির সময় তিনি এবং তার সমর্থকরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন।
  • মামলায় মোট ৯২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ ধরনের গ্রেপ্তার এবং আদালতে স্লোগান দেওয়ার ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন দৃঢ়ভাবে বলছে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

স্থানীয়রা আশা করছেন, দ্রুত বিচার কার্যক্রম এবং সুষ্ঠু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এমন সহিংসতা আর পুনরাবৃত্তি হবে না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং আন্দোলনের সময় শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।

MAH – 12517 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button