বাংলাদেশ

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে: ভারতের জন্য নতুন মাথাব্যথা

Advertisement

দীর্ঘদিনের বৈরিতা পেছনে ফেলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি পরবর্তী সময়ে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে শুরু করেছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এ নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে এবং বলেছে, এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

কেন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক হঠাৎ উষ্ণ হলো?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। একদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তান সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং ছাত্রনেতাদের সঙ্গেও আলাপ করেছেন—যারা হাসিনার পতনের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

ভারতের টেলিগ্রাফের সতর্কবার্তা

দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, “ভারতের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক উদ্যোগ।” কারণ ২০২৬ সালের শুরুতেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, আর তার আগে পাকিস্তান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক স্থাপন করছে।

ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু কূটনৈতিক নয়, এর মধ্যে রয়েছে ভূরাজনৈতিক কৌশলও। ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখেছে, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।

বাণিজ্য, ফ্লাইট ও নতুন সুযোগের কথা উঠছে

ইসহাক দার-এর সফরে উভয় দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
✔ সরাসরি ঢাকা-ইসলামাবাদ ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা
✔ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ
✔ কূটনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি

এই সবকিছুই ভারতের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ এতদিন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারতই প্রভাবশালী ছিল।

কেন ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে?

শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, হাসিনার ভারত-ঘনিষ্ঠ নীতিই তার পতনের একটি বড় কারণ। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি অসন্তোষ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ফলাফল—হাসিনা বিরোধী আন্দোলন এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার পতন।

এখন সেই শূন্যতা কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত যদি সময়মতো কৌশল না নেয়, তবে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তান প্রভাবশালী সহযোগী হয়ে উঠতে পারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৭১-এর ক্ষত এখনও শুকায়নি

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাস জটিল ও বেদনাদায়ক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল। সেই সময়ের জন্য পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।

জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু রাজনৈতিক দল আজও সেই যুদ্ধাপরাধের দায় পুরোপুরি অস্বীকার করে। যদিও আজকের অধিকাংশ বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নিয়েছে, তবুও ইতিহাসের এই দিকটি ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।

তবে কূটনৈতিক বাস্তবতা বলছে—অতীতের শত্রুতা সত্ত্বেও উভয় দেশ নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্ভাবনা খুঁজছে।

বিশ্লেষণ: দক্ষিণ এশিয়ার নতুন ভূরাজনীতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন শক্তির ভারসাম্য তৈরি করছে। বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে, তবে চীনও এই সমীকরণে যুক্ত হবে। এর অর্থ—ভারতের কৌশলগত প্রভাব কমে আসতে পারে।

ভারতের নীতিনির্ধারকদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করা। ভারত যদি দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ না নেয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও ভূরাজনীতি ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এর প্রভাব কী হবে?

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অস্থিরতা চলছে, তার মধ্যে পাকিস্তানের এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে। বিশেষত বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বাংলাদেশ নতুন কূটনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করে, তবে ভারতের একচেটিয়া প্রভাবের যুগ শেষ হতে পারে।

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই উষ্ণতা নিছক কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক খেলায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ভারতকে এখনই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নইলে আগামী কয়েক বছরে আঞ্চলিক ক্ষমতার মানচিত্র পুরোপুরি বদলে যেতে পারে।

MAH – 12514 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button