শিক্ষা

শিক্ষা উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন সচিবের আশ্বাসে ক্যাম্পাসে ফিরলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

Advertisement

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা এবং বিএসসি ইস্যুতে চলমান আন্দোলনকে সাময়িক বিরতি দিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। বুধবার ভোরে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস পাওয়ার পর তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

বিক্ষোভের পটভূমি

বুয়েট শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা-এ ইঞ্জিনিয়ারদের কোটা এবং বিএসসি ডিগ্রি সংক্রান্ত পদবির ব্যবহারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার থেকে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বুয়েট ক্যাম্পাসের রোকন হত্যার হুমকির প্রতিবাদ এবং ডেসকোর (DESCO) নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমে ডাকা সমন্বয় সভার কারণে তীব্র রূপ নেয়।

মিছিলকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। পরে তারা অবস্থান নেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে, যেখানে পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর শিক্ষা উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের মূল দাবিসমূহ

বুয়েট শিক্ষার্থীরা মূলত তিনটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন।

১. ৯ম গ্রেডের কোটা বাতিল: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ৯ম গ্রেডে ৩৩ শতাংশ কোটা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন যে, এই কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে পদে নিয়োগ দেওয়া হোক।

২. ১০ম গ্রেডের কোটা বাতিল: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ১০ম গ্রেডে ১০০ শতাংশ কোটা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা চান, এই কোটা বাতিল করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হোক।

৩. পদবির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকে “ইঞ্জিনিয়ার” পদবি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ এই পদবি ব্যবহার করে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা আশ্বাস দেন যে, তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং আইনের সীমার মধ্যে থাকবে। পুলিশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

শিক্ষা উপদেষ্টা এবং জনপ্রশাসন সচিব শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তাদের দাবিগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে। এই বৈঠকে শিক্ষার্থীদের হুমকিদাতাদের আইনের আওতায় আনার এবং কোটা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রশাসন জানিয়েছে যে, সকল প্রকার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফেরা শিক্ষার্থীরা জানান যে, তারা বৈঠকের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করবেন। তবে তারা বলেছেন যে, তাদের আন্দোলন পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, তাদের সচেতনতা ও হড়মড়ি থাকবে।

এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চাই শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া হোক। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাব।”

সমসাময়িক প্রেক্ষাপট

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কোটা ইস্যু নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই তিন দফা আন্দোলন চালাচ্ছেন। দেশের উচ্চশিক্ষা এবং চাকরিতে যোগ্যতা ভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে চলমান এই বিতর্ক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিল করলে চাকরির ক্ষেত্রে যোগ্যতা ভিত্তিক সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, “মেধা নয়, কোটার কারণে অনেক শিক্ষার্থী পিছিয়ে যায়। এটি শিক্ষার নৈতিকতাকে প্রভাবিত করছে।”

সামাজিক ও অনলাইন প্রতিক্রিয়া

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, টুইটার হ্যান্ডল এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণ এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করা আবশ্যক।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আইনের প্রশ্ন

শিক্ষার্থীরা রোকন হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ করেছেন, যা তাদের আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তুলেছে। পুলিশ জানান যে, এই ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা এবং জনপ্রশাসন সচিবও আশ্বাস দিয়েছেন যে, এই ধরনের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি প্রদান করা হবে।

ভবিষ্যতের কর্মসূচি

শিক্ষার্থীরা বলেছে যে, তারা ভবিষ্যতে বৈঠক এবং আলোচনা মাধ্যমে তাদের দাবির সমাধান চায়। যদি বৈঠকে ফলাফল না আসে, তবে তারা পুনরায় শক্তিশালী আন্দোলন শুরু করতে প্রস্তুত। তবে তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং আইনের আওতায় থেকে আন্দোলন চালানোর কথা বলেছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলন শুধু বুয়েট শিক্ষার্থীদের নয়, দেশের সকল উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তারা বলছেন, “যখন শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবির জন্য সংগঠিত হয়, তখন প্রশাসন বাধ্য হয় শুনতে এবং সমাধান দিতে।”

MAH – 12487 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button