বাংলাদেশ

৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে ফিরলো

Advertisement

দেশের জনস্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। ১৯৯৪ সালের এক সার্কুলারকে চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে—অত্যাবশ্যকীয় ৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার এখন থেকে সরকারের হাতে থাকবে, উৎপাদনকারীর নয়।

দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত রায়ে ঘোষণা করেছেন যে, ৭৩৯টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা আবারও সরকারের হাতে ফিরবে। এই রায় কার্যকর হলে ওষুধের বাজারে অস্থিরতা কিছুটা কমবে এবং জনগণ ন্যায্যমূল্যে ওষুধ পেতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হাইকোর্টের রায়ে সরকারের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা

সোমবার (২৫ আগস্ট) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালত জানিয়েছেন, ১৯৮২ সালের ‘ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’-এর ১১ ধারা অনুযায়ী সরকার ওষুধের দাম নির্ধারণে একক ক্ষমতা রাখে। অতএব, ১৯৯৪ সালের বিতর্কিত সার্কুলার কার্যকর নয়।

এই রায় অনুযায়ী স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি ড্রাগ), এবং ওষুধ মালিক সমিতিকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালের ঘটনাপ্রবাহ

১৯৯৩ সালে সরকার ৭৩৯টি অপরিহার্য ওষুধের দাম নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু এক বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে নতুন এক সার্কুলারের মাধ্যমে সরকারের হাতে থাকা ক্ষমতা সীমিত করা হয়। তখন মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখা হয়, বাকি ওষুধগুলোর মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে।

এতে সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় এবং বাজারে একধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়।

রিট আবেদন ও এর পেছনের কাহিনী

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১৮ সালে এই রিট দায়ের করে। তাদের দাবি ছিল, ১৯৯৪ সালের সার্কুলার জনস্বার্থবিরোধী এবং ওষুধের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

রিটে বলা হয়, সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম উৎপাদনকারীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা মুনাফার জন্য অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। তাই এই ক্ষমতা সরকারের হাতে ফিরিয়ে আনা জরুরি।

জনস্বার্থ ও সম্ভাব্য প্রভাব

রায় কার্যকর হলে দেশের সাধারণ জনগণ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের হাতে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ফিরলে বাজারে অস্থিতিশীলতা কমবে, ওষুধের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে সক্ষম হবে।

এছাড়াও, স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীর মন্তব্য

রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের জানান, “এই রায় জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন। সরকারের হাতে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে আদালত সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষিত করেছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় কার্যকর হলে ওষুধের বাজারে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে। তবে একইসঙ্গে সরকারের ওপর দায়িত্ব বাড়বে যাতে তারা দ্রুত ও কার্যকরভাবে মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।

সংক্ষিপ্তসার

৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে ফিরে আসা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি ইতিবাচক খবর। তবে ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের ওপর। জনগণ এখন অপেক্ষা করছে, এই রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওষুধের দাম কতটা নাগালের মধ্যে আসে।

এম আর এম – ১০৩৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button