
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানে নেমেছে। গত এক সপ্তাহে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আবাসন, শ্রম আইন ও সীমান্ত সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২২ হাজার ২২২ জন প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ খবর জানিয়েছে প্রভাবশালী দৈনিক গালফ নিউজ।
এই অভিযান চলে ১৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা।
কোন আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার?
সৌদি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে:
✔ আবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে: ১৩,৫৫১ জন
✔ সীমান্ত আইন ভঙ্গের দায়ে: ৪,৬৬৫ জন
✔ শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে: ৪,০০৬ জন
এছাড়া অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েছেন ১,৭৮৬ জন বিদেশি নাগরিক। এদের বেশিরভাগই ইথিওপিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিক।
অভিযানের ফলাফল: দেশে ফেরত পাঠানো ও শাস্তির ব্যবস্থা
গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসীদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার জনকে তাদের নিজস্ব কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে ভ্রমণ নথি সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এর মধ্যে ১২,৯২০ জনকে ইতোমধ্যে সৌদি আরব থেকে দেশে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া অভিযানের সময় সৌদি আরব ত্যাগের চেষ্টা করার সময় ৩৩ জন প্রবাসীকে আটক করা হয়েছে। আর আবাসন ও কর্মসংস্থান আইন লঙ্ঘনকারীদের আশ্রয় দেওয়া বা পরিবহন করার অভিযোগে সৌদিতে বসবাসরত ১৮ জন সৌদি নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়াধীন মামলার সংখ্যা
বর্তমানে সৌদিতে ২৫ হাজার ৯২১ জন প্রবাসীর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে:
✔ পুরুষ: ২৩,৪১৯ জন
✔ নারী: ২,৫০২ জন
আইন লঙ্ঘনের শাস্তি কতটা কঠোর?
সৌদি আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা হতে পারে।
এছাড়া যে কোনো সৌদি নাগরিক যদি অবৈধ প্রবাসীদের আশ্রয়, পরিবহন বা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন, তাদেরও কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
কেন সৌদি আরব এত কঠোর হচ্ছে?
সৌদি আরব বিশ্বে অন্যতম বড় শ্রমবাজার। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ মানুষের বসবাস, যার মধ্যে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বিভিন্ন খাতে কর্মরত।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি সরকার ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।
এই নীতির মূল লক্ষ্য:
✔ অবৈধ প্রবেশ রোধ
✔ আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা
✔ দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা
✔ সৌদি নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান বাড়ানো
অবৈধ প্রবাসীরা কোন কোন ঝুঁকিতে থাকে?
অবৈধভাবে সৌদি আরবে অবস্থান করা প্রবাসীরা নানা ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন। যেমন:
যেকোনো সময় গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড
দেশে ফেরত পাঠানো
জরিমানা
চাকরি হারানোর ঝুঁকি
মানবপাচার চক্রের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা
প্রবাসীদের জন্য সৌদি সরকারের পরামর্শ
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিকবার জানিয়েছে, বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সৌদিতে প্রবেশ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যারা বর্তমানে সৌদিতে রয়েছেন, তাদেরও ইকামা (বাসস্থান অনুমতি) ও কর্ম অনুমোদনের মেয়াদ বৈধ আছে কিনা তা নিয়মিত যাচাই করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবস্থা কেমন?
সৌদি আরবে বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েক লাখ শ্রমিক কর্মরত। দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় অংশই গৃহকর্মী, নির্মাণশ্রমিক, ড্রাইভার, ক্লিনার এবং বিভিন্ন সেবা খাতে কাজ করেন।
তবে অভিযানের কারণে অনেকে বিপাকে পড়ছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সৌদিতে অবৈধ প্রবাসী হিসেবে ধরা পড়া বাংলাদেশিদের ধাপে ধাপে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সরকার সৌদিতে অবস্থানরত প্রবাসীদের আইন মেনে চলতে এবং অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা না করতে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
প্রবাসী বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সৌদির এ ধরনের কঠোর নীতি বাংলাদেশসহ শ্রমশক্তি রপ্তানিকারক দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তারা বলছেন:
✔ শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখতে হলে প্রবাসী কর্মীদের বৈধভাবে পাঠানো ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
✔ অবৈধভাবে প্রবাস যাওয়া বন্ধ করতে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
সর্বশেষ বার্তা
সৌদি আরব সরকারের বার্তা স্পষ্ট—আইন ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় নেই।
তাই যারা প্রবাসে যেতে চান, তাদের অবশ্যই বৈধ ভিসা, কর্মচুক্তি এবং অনুমোদিত মাধ্যমে যাত্রার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
MAH – 12479 , Signalbd.com