টেকনাফে মানব পাচারকারীদের আস্তানা থেকে নারী-শিশুসহ ১৭ জন উদ্ধার,
আটক ১
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া পাহাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি সফল অভিযানে নারী ও শিশুসহ ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে (২৫ জানুয়ারি ২০২৫) এই অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় আলী আবদুল্লাহ নামের এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং বাকিরা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। নৌবাহিনীর টেকনাফ কনটিনজেন্টের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আফজাল হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কচ্ছপিয়ার পাহাড়ি এলাকায় মানব পাচারকারীদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে জিম্মি করে রাখা ১৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক আলী আবদুল্লাহকে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, সাগর–তীরবর্তী বাহারছড়া ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচারকারীরা সিন্ডিকেট করে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসেন। রোহিঙ্গাদের প্রলোভনে ফেলে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে পাহাড়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুলিশ–র্যাব ও নৌবাহিনীর অভিযানে কেবল চলতি জানুয়ারি মাসেই প্রায় দেড় শতাধিক প্রতারণার শিকার লোকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নৌবাহিনী ১ পাচারকারীসহ ১৮ জনকে থানায় সোপর্দ করেছে। রোববার ওই পাচারকারীকে কক্সবাজার আদালতে পাঠানো হবে। উদ্ধারকৃত যাত্রীদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
টেকনাফে মানব পাচারের বর্তমান পরিস্থিতি
টেকনাফ ও উখিয়া এলাকায় মানব পাচার একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলে অপহরণ ও পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানব পাচারকারীরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে প্রতারণা করে থাকে। তাদেরকে পাহাড়ি এলাকায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে টেকনাফে দুই যুবককে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে হাত বদলের সময় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে এবং পাচার চক্রের ২ সদস্যকে আটক করে।
মানব পাচার প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগ
মানব পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, উপজেলার সকল ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সাথে অপহরণ, মানব পাচার, অবৈধ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সকল গ্রাম পুলিশ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়া, বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে পাচারকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানব পাচারের কারণ ও প্রতিকার
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি) এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের প্রধান কারণ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। পাচারের শিকার হওয়া মানুষের ৫১ শতাংশই জীবিকার কারণে এই ঝুঁকিতে পড়েন।
মানব পাচার রোধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
টেকনাফে নৌবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে ১৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার এবং এক পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে, যা মানব পাচার রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য।