ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্র, জ্বালানি সংরক্ষণাগার এবং প্রেসিডেন্ট ভবনের সামরিক কমপ্লেক্স।
হামলার বিস্তারিত তথ্য
রোববার গভীর রাতে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সানার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বোমা বর্ষণ চালায়। সরকারি সূত্র জানায়, নিহতদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এ হামলা ছিল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া। তাদের মতে, হুতিরা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নতুন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা একাধিক বিস্ফোরক বহন করছিল।
হামলার পেছনের কারণ
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইয়েমেনের হুতি বাহিনী ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে। ইরান সমর্থিত হুতিরা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। যদিও এসব আক্রমণের অধিকাংশই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, তবুও হুতিদের কার্যক্রম থেমে নেই।
হুতিদের প্রতিক্রিয়া
হুতিদের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের মুরতাদা এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজার ভাইদের পাশে থাকার জন্য আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ইসরায়েল আমাদের হামলা থামাতে পারবে না।”
অন্যদিকে, হুতিদের দাবি, ইসরায়েল সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে, যাতে সাধারণ জনগণ কষ্টের মধ্যে পড়ে। তাদের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তেলের স্থাপনায় হামলা সরাসরি নাগরিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং একে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশও পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজার যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই ইয়েমেনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পরপরই হুতিরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজ ও স্থলভাগে হামলা চালানো শুরু করে। এর ফলে লোহিত সাগর অঞ্চলেও নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়। নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাবে ইসরায়েল ইয়েমেনে বারবার বিমান হামলা চালিয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ধরনের পাল্টাপাল্টি হামলা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠছে। হুতিদের হামলা যত বাড়বে, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও ততই সহিংস হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
সানায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ছয়জনের মৃত্যু আবারও প্রমাণ করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। গাজার যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মহল যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তবে এ সংঘাত ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এম আর এম – ১০২৮, Signalbd.com



