বাংলাদেশ

পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাইছে বাংলাদেশ

Advertisement

বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশের পররাষ্ট্র নীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সোমবার (২৪ আগস্ট) জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে রাজনৈতিক বা ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা হয়নি, বরং বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা।

এসময় তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গত সরকারের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা চাই এমন একটি সম্পর্ক যা আমরা অন্যান্য বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে রাখি। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে।”

বৈঠক ও আলোচনার প্রেক্ষাপট

এদিন সকাল ১১টার দিকে হোটেল সোনারগাঁও, ঢাকা-তে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্র কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তৌহিদ হোসেন বলেন, “একাত্তরের ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের সম্পর্ক হবে সম্পূর্ণ পারস্পরিক মর্যাদা এবং শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।”

অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্ক

তৌহিদ হোসেনের মতে, দুই দেশের সম্পর্ক শুধুমাত্র রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতায় থাকবে না, বরং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাও গুরুত্ব পাবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। কৃষি, রফতানি-আমদানি, তথ্য প্রযুক্তি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।”

বাংলাদেশ-আমদানি-রপ্তানি সংস্থা (বাংলারেট) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি ও যৌথ উদ্যোগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ প্রধানত চামড়া, কাপড়, তৈরি পোশাক এবং প্রযুক্তি পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করে থাকে।

একাত্তরের ইস্যু এবং ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষাপট

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিহাস জটিল। স্বাধীনতার পর থেকে একাধিক পর্যায়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “একাত্তরের ঘটনায় পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ রয়েছে। আমরা চাই এই ইস্যু কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, একাত্তরের ইতিহাস সম্পর্কিত সমাধান ও ক্ষমা চাওয়া দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। এছাড়া এটি দুই দেশের মধ্যে জনগণের বিশ্বাস ও আন্তঃসাহিত্যিক সংযোগও দৃঢ় করবে।

সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সহযোগিতা

শুধু রাজনীতি বা বাণিজ্য নয়, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে। দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ছাত্র বিনিময় প্রোগ্রাম, গবেষণা সংক্রান্ত সহযোগিতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।

বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও কূটনীতিকরা মনে করেন, এই ধরনের আন্তঃসংস্কৃতিক সহযোগিতা দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করবে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “বাংলাদেশ চাইছে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে হোক। আমাদের লক্ষ্য শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ক নয়, বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীল ও ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তোলা।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা চাই এই সম্পর্ক যেন দীর্ঘমেয়াদী এবং উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সম্মান, ন্যায্যতা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

বিশ্ব রাজনীতির দিক থেকেও বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুই দেশের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য স্পষ্ট করছে যে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাভিত্তিক সম্পর্ক চায়। একাত্তরের ইতিহাস ও বর্তমান বাণিজ্য-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে সমাধান করে দুই দেশ আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে। দুই দেশের সাধারণ জনগণ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও সহজ, ফলপ্রসূ ও আন্তঃসামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

MAH – 12473 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button