দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দেশের বাজারে কাঁচা মরিচ সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্র। সম্প্রতি এই বন্দরে ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারে মরিচের দাম কমেছে। বিভিন্ন প্রকার মরিচের কেজি প্রতি দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা হ্রাস পেয়ে এখন ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, হিলি বন্দরে ব্যবসায়ীরা মরিচ কেনাবেচায় ব্যস্ত। কয়েকদিন আগে, অর্থাৎ গত বুধবার প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হতো ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। বৃহস্পতিবার দাম নেমে আসে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। শনিবার প্রথম দিনে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা হ্রাস পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে মরিচ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাই দাম কমানো ছাড়া উপায় নেই।
হিলি স্থলবন্দরের কমিশন ব্যবসায়ী রফিক বলেন,
“কয়েক দিন ধরে মরিচের আমদানি ভালো হচ্ছে। দাম কমে গেলে আমাদের ব্যবসায়ও সুবিধা হয়। আজ আমরা প্রতি কেজি ১১০ টাকায় মরিচ কিনেছি।”
অন্যদিকে, আমদানিকারক সাহাবুল হোসেন জানান,
“চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। তবে অতিরিক্ত গরমে মরিচ দ্রুত পচে যাচ্ছে। যে মরিচ আমরা ১৮০ টাকায় কিনেছিলাম, সেটি এখন ১১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। যদি আমদানি আরও বৃদ্ধি পায়, দাম আরও কমতে পারে।”
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা এম আর জামান বাঁধন বলেন,
“হিলি স্থলবন্দরে আমদানি করা প্রতি মেট্রিক টন কাঁচা মরিচের শুল্ক ৫০০ ডলার। ফলে প্রতি কেজি শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৩৬ টাকা ৭৮ পয়সা। আমদানিকৃত সব ধরনের কাঁচা পণ্য দ্রুত ছাড়করণের জন্য ব্যবসায়ীদের কাস্টমসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।”
হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি মাসের শুরু থেকে শনিবার পর্যন্ত ভারত থেকে ১৬৯টি ট্রাকে ১,৩০৮ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর ও মরিচ বাজারের গুরুত্ব
হিলি স্থলবন্দর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। এখান দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য, সবজি ও মসলার আমদানি হয়। বিশেষত কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ও অন্যান্য তাজা পণ্যের সরবরাহের ক্ষেত্রে হিলি বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম।
মরিচ বাংলাদেশের রান্নাঘরের অপরিহার্য উপকরণ। দেশের প্রায় সব ধরনের খাবারে মরিচ ব্যবহার হয়। ফলে, মরিচের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে হিলি বন্দরে আমদানি বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
হিলি বন্দরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, মরিচের দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে অতিরিক্ত গরম ও আমদানি বৃদ্ধির কারণে মরিচের মান সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
একজন ব্যবসায়ী জানান,
“আমাদের ব্যবসায়ীরা মরিচের যথাযথ সংরক্ষণে অনেক খরচ করছেন। তবে দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের পক্ষে কেজি প্রতি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় কেনা সুবিধাজনক হয়েছে। আশা করি আগামী দিনগুলোতেও বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকবে।”
বাজারে দাম কমার কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিলি স্থলবন্দরে মরিচের আমদানি বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম স্বাভাবিকভাবেই কমেছে। এছাড়া, গরমের কারণে তাজা মরিচ দ্রুত নষ্ট হয়, যা বাজারে বিক্রির আগে মূল্য হ্রাসের প্রয়োজন তৈরি করে।
ভবিষ্যতে বাজার পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হিলি বন্দরে কাঁচা মরিচের আমদানি বৃদ্ধি পেলে আগামী কয়েক মাসে দাম আরও কমে আসতে পারে। তবে এটি ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ অতিরিক্ত গরমে মরিচের ক্ষতি হওয়ায় লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ব্যবসায়ীরা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।
হিলি বন্দরের আর্থিক প্রভাব
হিলি স্থলবন্দর থেকে আমদানি বৃদ্ধির ফলে কাস্টমস রাজস্বও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের শুল্ক বসানো হওয়ায় সরকারি রাজস্বও সঠিকভাবে বাড়ছে। এতে ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের খাদ্য বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে।
MAH – 12463 , Signalbd.com



