
দেশে টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেল থেকে রাতের মধ্যে দেশের ৯ জেলায় ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঝড়ের সম্ভাবনা ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত উল্লিখিত ৯ জেলার উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে অস্থায়ীভাবে ভারি বর্ষণ ও বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত
অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা তরিকুল নেওয়াজ কবির জানান, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টানা বর্ষণের প্রভাব
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ অনেক শহরে রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিম্নাঞ্চলও পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ৭২ ঘণ্টায় আরও ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৬ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
ঝড়ের পেছনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু বিরাজ করছে। এর ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগরে দ্রুতগতিতে মেঘমালা তৈরি হচ্ছে এবং সেটিই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দমকা বাতাস ও বজ্রঝড়ের সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই মৌসুমি প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকলে রাতের যেকোনো সময় হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া তৈরি হতে পারে।
স্থানীয় জনগণের সতর্কতা
আবহাওয়া অফিস থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলার বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে অপ্রয়োজনে না বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ছোট ট্রলারগুলোকে সমুদ্রে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নদীপথে চলাচলকারী লঞ্চ ও ফেরিগুলোকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে মৌসুমি ঝড় নতুন কিছু নয়। প্রতিবছর বর্ষাকালে এ ধরনের ঝড়-বৃষ্টি স্বাভাবিক হলেও এর তীব্রতা মাঝে মাঝে প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক বছর আগে ঠিক একই সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক ঝড়ে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং বহু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। তাই এবারও প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রশাসনের প্রস্তুতি
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক দল সক্রিয় করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। হঠাৎ করে প্রবল বর্ষণ বা ঝড় এখন অনেক বেশি ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।
সারসংক্ষেপ
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে রাতেই দেশের ৯ জেলায় ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যেই সমুদ্রবন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে এবং স্থানীয় জনগণকে সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয়—আবহাওয়া কতটা ভয়াবহ রূপ নেয় এবং এর প্রভাব কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
এম আর এম – ০৯৯৫, Signalbd.com