অর্থনীতি

 আগস্টের ২০ দিনে প্রবাসী রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার

Advertisement

চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৪ শতাংশ বেশি।

আগস্টের প্রথম ২০ দিনে রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, আগস্টের প্রথম ২০ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৫৩ কোটি ডলার। এতে বছর ব্যবধানে প্রায় ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে।

একদিনের রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, গত ২০ আগস্ট একদিনে প্রবাসীরা ৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে এসেছে মোট ৪১২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

ব্যাংক ভেদে রেমিট্যান্সের পরিমাণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো পাঠিয়েছে ২২ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার।

এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ৪১ শতাংশ রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানকে স্পষ্ট করে।

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০.৩২ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এই পরিমাণ ছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষ করে মার্চ ২০২৫ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা বছরের মধ্যে একদিন বা এক মাসের রেকর্ড হিসেবে ধরা যায়।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাব

দেশের মুদ্রা রিজার্ভ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগ প্রবাহে রেমিট্যান্সের বড় প্রভাব রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ অনেক পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ করছে। পাশাপাশি, দেশের বাণিজ্যিক এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করবে।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধান কারণ হলো প্রবাসীদের আয়ের বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজ লেনদেনও প্রবাসীদের মধ্যে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়িয়েছে।

শাহরিয়ার সিদ্দিকী আরও বলেন, “বর্তমানে প্রবাসীরা বিভিন্ন ব্যাংক ও অনলাইন মাধ্যমে সহজেই অর্থ পাঠাচ্ছেন। এর ফলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।”

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

গত বছর আগস্ট মাসে দেশে ১৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, কিন্তু চলতি বছর একই সময়ে এসেছে ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, প্রায় ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার বৃদ্ধি হয়েছে।

জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তুলনামূলকভাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট ২০ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স ৪১২ কোটি ডলার পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রবাসী রেমিট্যান্স দেশের মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে। এটি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

একজন অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন, “রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যাংকিং খাত ও ডিজিটাল লেনদেনের পরিধি বাড়ছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত।”

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

বিশ্লেষকরা আশা করছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আগামী কয়েক মাসেও বাড়বে। বিশেষ করে ঈদ বা গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং মুদ্রার মানের ওঠানামা রেমিট্যান্স প্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে।

সমাপনী

সর্বশেষ পরিসংখ্যান ও বিশেষজ্ঞ মতামত থেকে বোঝা যায়, প্রবাসী রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চলতি মাসের রেকর্ড সংখ্যা দেশের মুদ্রা রিজার্ভ এবং জনগণের আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতিতে এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে রেমিট্যান্স আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।

এম আর এম – ০৯৮৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button