
ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করা হচ্ছে মাত্র ৮৫ টাকা কেজি দরে। অথচ দেশের খুচরা বাজারে একই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। এ অস্বাভাবিক দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ ক্রেতারা। বাজারে নজরদারির অভাব, সরবরাহ ঘাটতি এবং হাতবদলের জটিলতাকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমদানির প্রকৃত খরচ কত?
বাংলাদেশের বাজারে মরিচের চাহিদা পূরণে প্রতিবেশী ভারত থেকেই মূলত কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, সব খরচ যোগ করেও বন্দরে পৌঁছাতে প্রতি কেজি মরিচের দাম সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন মরিচ দেশে এসেছে। ফলে সরবরাহ একেবারে শূন্য নয়, কিন্তু খুচরা বাজারে এ আমদানির কোনো প্রভাব পড়ছে না।
বাজারে হঠাৎ দাম বৃদ্ধি
গত মাসেও প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু আগস্টে এসে এ দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমন হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতাদের ওপর চাপ বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, বাজারে কার্যকর তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।
সরবরাহ সংকট নাকি কৃত্রিম সংকট?
বিক্রেতাদের দাবি, তারা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। যশোরের এক আমদানিকারক জানান, মরিচের একটি বড় অংশ মহারাষ্ট্র থেকে আনতে হচ্ছে, যার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে পাইকারিতে দাম তুলনামূলক কম রাখা হলেও হাতবদলের পর খুচরা বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি জোরদার করা জরুরি।
ভোক্তার ক্ষোভ
ঢাকার কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, “এক কেজি মরিচ কিনতে এখন তিনশ টাকা লাগছে। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
আরেক ভোক্তা বলেন, “মরিচ ছাড়া রান্না সম্ভব নয়, কিন্তু দাম এত বেশি যে বাধ্য হয়ে কম ব্যবহার করতে হচ্ছে।”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তারা বাজার মনিটরিং করছেন, তবে ক্রমবর্ধমান হাতবদলের কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কাঁচা মরিচের বর্তমান দামের পেছনে তিনটি বড় কারণ কাজ করছে:
১. স্থানীয় উৎপাদন বর্ষাকালে কমে আসা
২. আমদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা
৩. বাজারে অস্বচ্ছ লেনদেন ও হাতবদল
তাদের মতে, বাজারে সরবরাহের স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রতি ধাপে কত দামে বিক্রি হচ্ছে, তা প্রকাশ করা হলে অস্বাভাবিক দামের অভিযোগ কমবে।
সরকারের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর?
কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন ট্রাকভর্তি মরিচ দেশে আসছে। তবুও বাজারে দাম কমছে না।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, “চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে।” তবে তারা স্বীকার করেন, খুচরা বাজারে অতিরিক্ত মূল্য আদায় ঠেকাতে আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে দামের ধারা কেমন হতে পারে?
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে দামের চাপ কমবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশীয় উৎপাদিত মরিচ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম আরও কিছুটা কমতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও দীর্ঘায়িত হবে।
পরিশেষে
কাঁচা মরিচ বাংলাদেশের রান্নাঘরের অপরিহার্য উপকরণ। আমদানির খরচ তুলনামূলক কম হলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। সরবরাহ ঘাটতি, হাতবদলের ধাপ এবং বাজারে পর্যাপ্ত তদারকির অভাবেই সাধারণ মানুষ চড়া দামে মরিচ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, নাকি ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও দীর্ঘ হবে?
এম আর এম – ০৯৭৫, Signalbd.com