বানিজ্য

ভোমরা বন্দরে ৩ দিনে দুই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি, দাম কমেছে দেশে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দীর্ঘ চার মাস ২০ দিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি আবারও খুলেছে। মাত্র তিন দিনের মধ্যে প্রায় দুই হাজার টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। এর ফলে দেশের বাজারে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৭ টাকা কমেছে।

ভোমরা বন্দরের পুনরায় কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল হওয়ার আশ্বাস মিলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত আমদানি থাকলে বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় থাকবে এবং কৃষক-ভোক্তাদের স্বার্থ দুই-ই সুরক্ষিত হবে।

ভারতীয় পেঁয়াজের আগমনে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে

সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, “ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা কেজি দরে, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে। সরবরাহ বাড়তে থাকলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।”

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন দেশের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করতে পারছে না। তাই প্রতি বছর চাহিদার বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। ভোমরা বন্দর দিয়ে নিয়মিত পেঁয়াজ আসায় বাজারে সরবরাহ বাড়ছে, দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং ভোক্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন।

ভোমরা বন্দর দিয়ে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা জানান, “দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এখন নিয়মিত পেঁয়াজ আসছে। রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭০টি ট্রাকে প্রায় দুই হাজার টন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেছে। যদি আমদানি অব্যাহত থাকে, আগামী দিনগুলোতে বাজার দ্রুত স্থিতিশীল হবে।”

রাজস্ব কর্মকর্তা মো. রাসেল আহম্মেদ বলেন, “মাত্র তিন দিনেই প্রায় দুই হাজার টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। ইতোমধ্যেই এর প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে সরবরাহ আরও বাড়বে, দাম স্থিতিশীল হবে।”

জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বাজার মনিটরিং

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা বাজারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করছি। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লেও লক্ষ্য হচ্ছে যেন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হন। ইতোমধ্যেই বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সামনে আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।”

এছাড়াও তিনি জানান, জেলা প্রশাসন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলিতভাবে পেঁয়াজের বাজারে অবৈধ চড়া দামের প্রতিরোধে কাজ করছে।

পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশের চাহিদা ও সাপ্লাই চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা স্থানীয় উৎপাদন দ্বারা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন যদিও প্রতি বছর বেড়েছে, তবুও চাহিদার বড় অংশই ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন:

  • দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুম নির্ভর। খরিফ ও রবি মৌসুমে উৎপাদন বেড়ে যায়, কিন্তু বছরের বাকি সময়ে চাহিদা মেটানো যায় না।
  • ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসে।
  • দীর্ঘ সময় বন্দর বন্ধ থাকলে পেঁয়াজের মূল্য চড়া হয় এবং ভোক্তারা অসন্তুষ্ট হয়।

পেঁয়াজের মূল্য পরিবর্তনের প্রভাব

দেশে পেঁয়াজের দাম কমার ফলে সাধারণ ভোক্তা স্বস্তি পাচ্ছেন। পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন:

  • স্থানীয় চাহিদা পূরণে পেঁয়াজের আমদানির গুরুত্ব অপরিসীম।
  • নিয়মিত আমদানি থাকলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকে।
  • কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়।

চলতি পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ মূল্য প্রবণতা

ভোমরা বন্দর থেকে নিয়মিত আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং চড়া দামের প্রবণতা থাকবে না।

অর্থনীতিবিদদের মতে:

  • পেঁয়াজের নিয়মিত আমদানি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • দাম কমলে ভোক্তা স্বস্তি পায় এবং ব্যবসায়িক লেনদেনও স্থিতিশীল হয়।
  • স্থানীয় কৃষকদের ক্ষতি না হয়, এ বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

সমাধান ও পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুধু আমদানি নয়, দেশি উৎপাদনও বাড়াতে হবে। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানরা একত্রে কাজ করে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে।

  • পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উন্নত বীজ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
  • কৃষকদের সহায়তা দিয়ে উৎপাদন খরচ কমানো যায়।
  • বন্দর ও সরবরাহ চেইন দ্রুতগতিতে পরিচালনা করলে বাজারে চড়া দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

    সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দীর্ঘ চার মাস ২০ দিন বন্ধ থাকার পর আবার খুলেছে। মাত্র তিন দিনে প্রায় দুই হাজার টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা কেজি থেকে, এবং বাজারে আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা প্রশাসন, রাজস্ব কর্মকর্তা ও কৃষি বিপণন বিভাগ মিলিতভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। নিয়মিত আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।

MAH – 12425 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button