অর্থনীতি

সুদহার বাড়লেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

ব্যাংকঋণের সুদহার বৃদ্ধি নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা মুনাফা করেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। সাময়িক কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

নীতি সুদহার বৃদ্ধি ও এর প্রভাব

দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এর ফলে ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ১৫-১৬ শতাংশ সুদের হার দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন।

তবে, এ বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “ব্যবসা পরিচালনায় মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, এবং বাজারের চাহিদাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো না থাকলে ব্যবসার জন্যও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় না। তাই, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে।”

গভর্নর আরও উল্লেখ করেন যে, পরিস্থিতি উন্নত করতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, “ধৈর্য ধরে ধাপে ধাপে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।”

চালের দাম ও খাদ্য পরিস্থিতি

বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়েছে। তবে, গভর্নরের মতে, বাংলাদেশে চালের দাম তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতে চালের উৎপাদন ভালো হয়েছে। যদি তারা চাল রপ্তানি করে, তবে আমাদের আমদানির খরচ কিছুটা কমবে। এ বছর আমাদের প্রায় ১৯-২০ লাখ টন চাল আমদানি করতে হবে।”

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা ও সমাধানের পথ

ব্যাংক লুটপাট এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে গভর্নর জানান, “ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিদেশেও কিছু মামলা চলছে। তবে, এই কাজ শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের একার নয়; সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও ভূমিকা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যাংক খাতের দুর্বলতাগুলো মেরামত করতে যৌথ অনুসন্ধান দল গঠন করা প্রয়োজন। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

দুর্বল ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “আমরা আমানতকারীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তাদের ক্ষতি যেন না হয়, সে বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ব্যবসায়ীদের জন্য বার্তা

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “বাজারের চাহিদা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আপনাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সাময়িক কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে সমাধানযোগ্য। নীতিগত পরিবর্তন ও সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চলছে।”

সুদহার বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের মান সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি কঠিন সময় হলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও ধৈর্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button