
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সরকারের লক্ষ্য অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হলেও অনেক সময় বড় অপরাধীরা ধরা পড়ে না। তিনি বলেন, “আমরা সব সময় চুনোপুঁটি ধরি, রুই–কাতলা ধরা পড়ে না। তবে রাঘববোয়ালদের ধরার চেষ্টা চলছে।”
তিনি আজ সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সরকারের লক্ষ্য নির্দোষ কাউকে শাস্তি না দেওয়া এবং একই সঙ্গে অপরাধীদের ছাড় না দেওয়া। তবে বাস্তবে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ অপরাধীদের সহজে ধরতে পারলেও বড় মাপের অপরাধী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি জানান, সরকার এ সমস্যাকে চিহ্নিত করেছে এবং বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে বড় অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
১৫ আগস্টের ঘটনায় ব্যাখ্যা
১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিতে আসা এক রিকশাচালককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। ওই দিন যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য ছিল ওই দিন জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা।
মব জাস্টিস প্রসঙ্গে মন্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে মব জাস্টিস (উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার) নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঢাকায় এ ধরনের ঘটনা কমলেও আশপাশের এলাকায় এখনো ঘটছে। রংপুরসহ কয়েক জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সরকার এটি রোধে সচেষ্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, “মব জাস্টিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, এটা বলা যাবে না। তবে কমিয়ে আনার জন্য কাজ চলছে।”
পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত প্রসঙ্গ
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন রশীদসহ ১৮ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “পুলিশকে বরখাস্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনুপস্থিতি বা দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভবিষ্যতেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”
নাসির উদ্দিন গ্রেপ্তার নিয়ে মন্তব্য
এক প্রশ্নে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমাকে না জিজ্ঞেস করে আদালতকে জিজ্ঞেস করুন। পুলিশের গ্রেপ্তার যদি অবৈধ হতো, আদালত তাঁকে ছেড়ে দিত। আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নতুন নিয়োগ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ২৭ হাজারের বেশি সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৮৫১ জনকে পুলিশে, ৪ হাজার ৪৬৯ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি), ৫ হাজার ৫৫১ জনকে আনসারে, ২০৮ জনকে ফায়ার সার্ভিসে এবং ১ হাজার ৫৫৮ জনকে কারা অধিদপ্তরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে তারা নির্বাচনের আগে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। কিছু পদ নতুন তৈরি হয়েছে, আবার কিছু শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। তবে কোনো ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উপদেষ্টা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অপরাধ দমন, নিরাপত্তা জোরদার এবং নির্বাচনের আগে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এ নিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অপরাধীদের মধ্যে ছোট থেকে বড় সবাইকে আইনের আওতায় আনা সরকারের প্রধান অঙ্গীকার।
সংক্ষিপ্তসার
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, সরকার সাধারণ অপরাধীদের পাশাপাশি বড় অপরাধীদের ধরার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। তবে বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বড় অপরাধীরা কত দ্রুত আইনের আওতায় আসবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা উন্নত হবে— সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০৯২৩, Signalbd.com