
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা রেলস্টেশনে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রাথমিকভাবে বড় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে যা ঘটেছে
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, খুলনা থেকে আমনুরা বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল সরবরাহের জন্য একটি ট্রেন আসছিল। ট্রেনটিতে প্রায় ৩০টি তেলবাহী ওয়াগন ছিল। এর মধ্যে ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা প্রথম সাতটি ওয়াগনের পরপরই পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। হঠাৎ এই দুর্ঘটনায় আমনুরা স্টেশন এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আমনুরা স্টেশনের মাস্টার হাসিবুল হক গণমাধ্যমকে জানান, প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে হঠাৎই পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে কী জানা গেছে
এখনও সুনির্দিষ্টভাবে লাইনচ্যুত হওয়ার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি রেলওয়ে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, ট্রেনের চাকা, লাইন বা সিগন্যাল সংক্রান্ত কোনো ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন। তাঁরা পৌঁছানোর পর বিস্তারিত জানা যাবে।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছি এটি যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে। তবে তদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
যাত্রী ও স্থানীয়দের ভোগান্তি
দুর্ঘটনার কারণে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেক যাত্রী বিকল্প হিসেবে সড়কপথে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে সড়কপথে যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।
স্থানীয় এক যাত্রী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম স্বাভাবিকভাবেই রাজশাহীতে যাব। কিন্তু হঠাৎ ট্রেন বন্ধ হয়ে গেল। এখন বাসে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও খরচ দুটিই বাড়িয়ে দিল।”
পূর্বেও ঘটেছে এমন দুর্ঘটনা
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে চট্টগ্রাম ও খুলনাতেও তেলবাহী ট্রেনের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছিল। প্রতিবারই প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি বা লাইন সমস্যাকেই দায়ী করা হয়। তবে এসব দুর্ঘটনায় দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব না পড়লেও সাময়িক ভোগান্তি তৈরি হয়।
রেলওয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না থাকার কারণেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁদের মতে, পুরনো লাইন ও পুরনো বগির কারণে ঝুঁকি বাড়ছে।
রেলওয়ের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের জরুরি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাইনচ্যুত ওয়াগনগুলো অপসারণ করে দ্রুত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
স্টেশন মাস্টার হাসিবুল বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ট্রেন চলাচল শুরু করতে। আশা করা যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধারকাজ শেষ হবে।”
সংক্ষিপ্তসার
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সারা দেশের অন্যান্য রুট স্বাভাবিক রয়েছে, তবে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি রেলওয়ের উদ্ধারকাজ ও তদন্তের ফলাফলের দিকে।
এম আর এম – ০৯০৩, Signalbd.com