বিশ্ব

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ও খামারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলিরা

Advertisement

পশ্চিম তীরের একাধিক গ্রামে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিরা শত শত হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি, খামার ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। ফিলিস্তিনিরা একে সুসংগঠিত তাণ্ডব বলে দাবি করেছে।

পশ্চিম তীরে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার অভিযোগ

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে আবারও তাণ্ডব চালিয়েছে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনে অন্তত ৪০০টি হামলা চালানো হয়েছে বিভিন্ন গ্রামে। এসব হামলায় বহু বাড়িঘর ও খামারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এই হামলাকে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন।

নিহত ও আহতের ঘটনা

নাবলুসের দক্ষিণে জাতরা গ্রামে গুলি করে হত্যা করা হয় সামিহ আল-আকতাস নামের ৩৭ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে। তিনি কয়েকদিন আগে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন, ভূমিকম্প দুর্গতদের সাহায্য শেষে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সহিংসতায় অন্তত ৩৯০ জন আহত হয়েছেন। বেশিরভাগই আহত হয়েছেন টিয়ার গ্যাস এবং অগ্নিসংযোগে সৃষ্ট ধোঁয়া থেকে। এছাড়া ছুরি ও রড দিয়ে হামলার খবরও পাওয়া গেছে।

ঘরবাড়ি ও সম্পত্তিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গাসান ডাগলাস জানিয়েছেন, অন্তত ৩০টি বাড়ি ও ১০০টির বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষিজমি, দোকানপাট, সুপারমার্কেট এবং গাড়ির গ্যারেজেও হামলা চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব হামলা সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনারা উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের থামায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

হাওয়ারা গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম ওমর বলেন, “আমরা গতকাল বসতিস্থাপনকারীদের অপরাধের নতুন মাত্রা দেখলাম। তারা শুধু বাড়িঘর নয়, মানুষ, দোকান, সুপারমার্কেট, এমনকি কৃষিজমি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। সেনাদের সুরক্ষায় তারা নির্ভয়ে এই হামলা চালিয়েছে।”

উত্তেজনার মধ্যে পাল্টা হামলা

হামলার ঘটনার পরদিনই পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী গুলি করে হত্যা করেন এক ইসরায়েলি-আমেরিকান নাগরিককে। তিনি মোটরসাইকেলে চলাচল করার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ফলে এলাকায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, বারবার একই ধরনের হামলার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হলেও বাস্তবে তা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

দীর্ঘদিনের দমননীতি

পশ্চিম তীর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু। ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা বহু বছর ধরেই ফিলিস্তিনিদের জমি দখল, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আসছে। ফিলিস্তিনিরা বলছে, এসব হামলার মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয়দের ভীতি প্রদর্শন ও তাদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই হামলা শুধু তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতিই ডেকে আনছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে আরও জটিল করছে। তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি কার্যকর চাপ প্রয়োগ না করে, তবে এমন হামলা ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাবে।

সমাপ্তি

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ও খামারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা আবারও প্রমাণ করছে যে এই অঞ্চলে সহিংসতা থামছে না। স্থানীয়রা বলছেন, সেনাদের নীরব সহযোগিতা থাকলে এই তাণ্ডব কখনো থামবে না। এখন প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক মহল কি এবার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, নাকি ফিলিস্তিনিরা আবারও নতুন সহিংসতার মুখোমুখি হবে?

এম আর এম – ০৮৯৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button