আঞ্চলিক

নোয়াখালীতে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীর আঙুল বিচ্ছিন্ন

Advertisement

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় চাঁদার টাকা না দেওয়ায় এক প্রবাসীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তাঁর বাঁ হাতের কবজিতে গুরুতর জখম হয় এবং একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আহত প্রবাসী বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক তৈরি করেছে।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে চৌমুহনী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর কন্ট্রাক্টর পোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার মো. সালাউদ্দিন (৩২) স্থানীয় কামাল হোসেনের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সালাউদ্দিন মোটরসাইকেলে করে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী চক্র তাঁর পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এতে তাঁর বাঁ হাতের কবজি গুরুতরভাবে কেটে যায় এবং একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হামলাকারীরা তাঁর কাছে থাকা প্রায় পাঁচ লাখ টাকা, মুঠোফোন ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়।

আহতের বর্তমান অবস্থা

প্রথমে স্থানীয়রা তাঁকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাঁকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর হাতের অপারেশন করা হয়েছে, তবে স্থায়ীভাবে একটি আঙুল হারাতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত হলেও দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।

হামলার কারণ ও পূর্বপটভূমি

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করার পর সালাউদ্দিন প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি গ্রামের কিছু পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেছিলেন। ওই সম্পত্তি বিক্রির টাকার ভাগ দাবি করে একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্র নিয়মিত তাঁকে চাঁদার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চরমে ওঠে। এমনকি সন্ত্রাসীদের ভয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কন্ট্রাক্টর পোল এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। কিন্তু তারপরও তাঁকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়।

পরিবারের অভিযোগ

আহত সালাউদ্দিনের মামা আবদুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, “চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী ও মাদকসেবী আমাদের পরিবারকে অনেকদিন ধরে হুমকি দিচ্ছিল। আমার ভাতিজা টাকা দিতে রাজি হয়নি বলেই তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এখনো আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

পুলিশের বক্তব্য

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রবাসীর হাত মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে এবং একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

এলাকায় আতঙ্ক ও জনমত

এলাকাজুড়ে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসী চক্র দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। কিন্তু অনেক সময় ভুক্তভোগীরা ভয়ে মামলা করতে সাহস পান না। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা দমন করতে হলে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মন্তব্য

অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেশে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সামাজিক সচেতনতা জরুরি। তাঁদের মতে, বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটায় বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও দেশে এসে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ছেন। এটি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করছে।

সমাপ্তি

নোয়াখালীর এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্র কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রবাসীরা এখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। প্রশ্ন থেকে যায়, কতদিন এভাবেই সাধারণ মানুষকে ভয়ের মধ্যে থাকতে হবে?

এম আর এম – ০৮৮১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button