
চার বছর আগে, ২০২১ সালের আগস্টে, আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণ করে ইমারাতে ইসলামিয়া। শুরুতে আন্তর্জাতিক মহলে অনিশ্চয়তা ও বিরোধের মুখে পড়লেও, ধীরে ধীরে তাদের কূটনৈতিক নীতি ও সম্পর্কের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। বর্তমানে, আফগানিস্তানের ৪১টি দেশে সক্রিয় দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশন রয়েছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্পর্কের উন্নতির প্রতিফলন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ
শাসনভার গ্রহণের পর, ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করেছে। এতে, প্রতিবেশী দেশগুলো, আঞ্চলিক শক্তি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও সম্প্রসারণে সফলতা অর্জন করেছে।
রাশিয়া, ইমারাতে ইসলামিয়াকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পাঁচটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূতদের গ্রহণ করেছে। ফলে, বিশ্বের সক্রিয় আফগান দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১-এ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পুনঃপ্রবেশ ও সহযোগিতা
জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন আফগানিস্তান (ইউএনএএমএ), ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। এটি ইমারাতে ইসলামিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গঠনমূলক সম্পর্কের সূচনা ও মানবিক সহায়তার প্রতিফলন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জোরদার ও উচ্চপর্যায়ের সফর
গত চার বছরে, ইমারাতে ইসলামিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, কাতার, ওমান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান ও চীন সফর করেছেন। এই সফরগুলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়ক হয়েছে।
কাবুল আঞ্চলিক সহযোগিতা উদ্যোগ সম্মেলন
কাবুল আঞ্চলিক সহযোগিতা উদ্যোগ সম্মেলন আয়োজন করেছে, যাতে কাতার, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, তাতারস্তান, পাকিস্তান, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও বিদ্যমান সমস্যার সমাধান খোঁজা।
কূটনৈতিক মিশনের বিস্তার ও সক্রিয়তা
কাবুলে বর্তমানে ২৩টি বিদেশি দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশন সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া, জার্মানিতে কূটনীতিক পাঠানো ও পাঁচটি দেশের পক্ষ থেকে আফগান রাষ্ট্রদূতদের আনুষ্ঠানিক গ্রহণের ফলে, বিশ্বজুড়ে আফগান দূতাবাস ও মিশনের সংখ্যা বেড়ে ৪১-এ দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন সরকারের পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
মার্কিন সরকার ইমারাতে ইসলামিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খলিফা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, আবদুলআজিজ হাক্কানি ও ইয়াহইয়া হাক্কানির ওপর ঘোষিত পুরস্কার প্রত্যাহার করেছে। রাশিয়া, কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান ইমারাতে ইসলামিয়ার নাম নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর তালিকা থেকে সরিয়েছে। বিশেষ করে, রাশিয়া আফগানিস্তানের ইমারাতে ইসলামিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইমারাতে ইসলামিয়ার কূটনৈতিক নীতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইমারাতে ইসলামিয়া বলেছে, তারা আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় এবং দেশগুলোকে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে রাশিয়ার পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।
এই চার বছরে, ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন পরিচিতি লাভ করেছে। তাদের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি ও সম্পর্কের মাধ্যমে, আফগানিস্তান বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
MAH – 12351 , Signalbd.com