বানিজ্য

বাগেরহাটে বাগদা চিংড়ি মড়ক: চাষিদের দিশেহারা অবস্থা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট জেলা, যা ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত বাগদা চিংড়ির জন্য বিখ্যাত, বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। ভাইরাস, পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ঘেরের অবস্থা ও চাষিদের অভিজ্ঞতা

বাগেরহাটের চাকশ্রী বাজারের চাষি মো. শাহজাহান জানান, গত বছর এই সময়ে তিনি প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি চিংড়ি ধরতেন। কিন্তু বর্তমানে ঘেরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, জাল ফেললেও প্রায় খালি উঠে আসে। তিনি বলেন, “লাখ টাকার পোনা দিয়েছি, ঘেরে এখন শূন্য অবস্থা।”

রামপালের চাষি সেলিম হোসেন আরও বলেন, “আমাদের ঘেরে এখন যা অবস্থা, তাতে ঋণ শোধ করাই মুশকিল হবে। এই অবস্থা চললে আগামী মৌসুমে চাষ করা কঠিন হয়ে যাবে।”

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগ

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. আরিফুল ইসলাম জানান, “ঘেরের পানি ও মাটি সংগ্রহ করে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হবে। দ্রুত ফলাফল জানানো হবে, যাতে চাষিরা সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেন।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ভাইরাসের পাশাপাশি পানি স্বল্পতা, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও লাগাতার বৃষ্টির কারণে নোনা পানির চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চাষিদের পরিকল্পিতভাবে পোনা নির্বাচন, ঘের প্রস্তুতি এবং পানি ব্যবস্থাপনা করার পরামর্শ দিচ্ছি।”

উৎপাদন পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় ৫১ হাজার ১৫৯ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার ৩১৩টি বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। গত অর্থ বছরে এই জেলায় উৎপাদিত বাগদা চিংড়ির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৯৪০ টন। কিন্তু এবারের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক কম হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খুলনা অঞ্চলে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হ্রাস

খুলনা অঞ্চলে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি খামারিরা প্রতিবছরই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনাবৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকায় রোগবালাই দেখা দেয়। এতে চিংড়ি চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সম্ভাব্য সমাধান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

চিংড়ি চাষিদের জন্য কিছু সুপারিশ করা যেতে পারে:

  • পরিকল্পিত পোনা নির্বাচন: মানসম্মত পোনা নির্বাচন করে ঘেরে ছাড়া উচিত।
  • ঘের প্রস্তুতি: ঘেরের পানি ও মাটি পরীক্ষা করে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
  • পানি ব্যবস্থাপনা: পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা করা উচিত।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস: আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। ভাইরাস, পানি স্বল্পতা ও অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে তাদের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। তবে, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র ও মৎস্য বিভাগের সহায়তায় চাষিরা তাদের উৎপাদন পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

MAH – 12342 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button