বাংলাদেশ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিতে না আসার ঘোষণা ও নির্বাচন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি

Advertisement

বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বার্নামাকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ বা নিজে নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেন না।

রাজনীতিতে না আসার ঘোষণা

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “না, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই, আমি সেই লোক নই।” তিনি আরও বলেন, “সংস্কারের যে লক্ষ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার কাজ।” তিনি জানান, গত এক বছরে তারা অনেকটা পথ অতিক্রম করেছেন এবং আগস্টে তাদের প্রথম বছর পূর্ণ হবে।

ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার অন্যতম বড় অর্জন হলো ঐকমত্য কমিশন গঠন করা। এই কমিশন ১১টি সংস্কার কমিশনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার প্রতিবেদন এ মাসের শেষের দিকে দিতে পারে, যার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠন করা যাবে।

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি

ড. ইউনূস জানিয়েছেন, দেশ এখন সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এবারের নির্বাচনটি আগের তিনটি “মিথ্যা” নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে। তিনি বলেন, “অনেক বছর পর প্রথমবারের মতো, জনগণ একটি নির্বাচন পাবে। কারণ আগের নির্বাচনগুলো ছিল ‘মিথ্যা’ নির্বাচন। কেউ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। মানুষ জানে না ভোটকেন্দ্রে কী হয়েছে।”

লাখ লাখ ভোটারের প্রত্যাশা

যেসব লাখ লাখ ভোটার হাসিনার আমলে ভোট দিতে পারেননি, তাদের জন্য এবারের নির্বাচনটি অনেক বড় হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচন হবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, যাতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।”

ড. ইউনূসের রাজনৈতিক ইতিহাস

ড. ইউনূস ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শহাবুদ্দিন তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। তার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ২০২৫ সালের মার্চে তিনি ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ শিগগিরই স্পেসএক্সের স্টারলিংকের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা

ড. ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে, যাতে তারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।”

পোশাক শিল্পের সহায়তা

দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে পোশাক শিল্পে যে disruptions ঘটেছে, তা মোকাবিলায় ড. ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত, তাই এই খাতের উন্নয়নে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা জনপ্রিয় করেন। এছাড়া, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯) ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল (২০১০) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব হবে। এছাড়া, ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার মতো মানবিক উদ্যোগগুলো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ড. ইউনূসের এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক এবং দেশের উন্নয়নের পথে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

MAH – 12333 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button