বাংলাদেশ

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে জার্মানির সর্বাত্মক সহযোগিতা

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে জার্মান সরকারের সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। গতকাল (২১ জানুয়ারি) এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।

গণতান্ত্রিক সংস্কারে জার্মানির প্রতিশ্রুতি

বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর দেশের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়ে বলেন, “আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা আপনাদের পাশে থাকব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জার্মান সরকার।

অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূস চ্যান্সেলরকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে একটি ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কাজ করছে।

জুলাই সনদ’ ও গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের চেতনায় একটি ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হবে। এই সনদ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে থাকবে।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-গণ–অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের দুর্নীতিবাজ শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

তিনি আরও জানান, এই আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা ছিল অনন্য। একটি ঘটনায় মাত্র ১২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী তার মাকে চিঠি লিখে আন্দোলনে যোগ দেয় এবং শাহাদাত বরণ করে। এই ধরনের ত্যাগ দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার পথে প্রেরণা জোগাবে।

রোহিঙ্গা সংকট ও নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান

বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি চ্যান্সেলরের কাছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরিতে জার্মানির সমর্থন চান।

ওলাফ শলৎজ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ জার্মানি সম্পর্ক আরও জোরদারের আহ্বান

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি জার্মানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফরে আসার এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের সুযোগ খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংহতি রক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে উদ্যোগী। সার্কের ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করে এ অঞ্চলে উন্নয়ন ও শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।”

জলবিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সম্ভাবনা

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একত্রে লাভবান হতে পারে, যা এ অঞ্চলের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জার্মান সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। গণতান্ত্রিক সংস্কার, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button