বাংলাদেশ

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে ৪০ মিনিট আটকে নবজাতকের মৃত্যু

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫ রাত প্রায় ৮টার দিকে শ্রীয়তপুর শহরের নিউ মেট্রো ক্লিনিকের সামনে মধ্যরাতে ঘটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের জোরাজুরি ও বাধায় প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকা অবস্থায় এক নবজাতক মৃত্যুবরণ করে। ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত অ্যাম্বুলেন্স চালকরা এখনও পলাতক, এবং ওই কার্যক্রমকে ‘মানবতাবিরোধী’ বলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ঘটনার বিবরণ

১. প্রসঙ্গ ও প্রশমিত সময়

  • ১৪ আগস্ট, দুপুরে ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার রোগি রুমা বেগম (স্ত্রী—নূর হোসেন সরদার) নিউ মেট্রো ক্লিনিকে সিজারিয়ান মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর থেকে নবজাতক শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছিল।⏤চিকিৎসক দ্রুত তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২. অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ ও যাত্রা

  • পরিবার একটি ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন পাঁচ হাজার টাকায়। যাত্রা শুরু করা মাত্রই ক্লিনিকের সামনে পৌছতেই ঘটনা ঘটে।

৩. সিন্ডিকেট বাধা, চাবি ছিনতাই, শারীরিক লাঞ্ছনা

  • স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ান জোরপূর্বক যাত্রা বাইরের গাড়ি বন্ধ করার চেষ্টা করেন। চালকের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেন, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন, পাশাপাশি রোগীর স্বজনদেরও মারধর করেন।⏤এই সিন্ডিকেট অন্য গাড়িকে ঢাকাগামী হতে দিচ্ছে না, তারা জোর করে নিজের গাড়িতেই রোগী স্থানান্তর করতে চেয়েছিলেন।

৪. অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ ও নবজাতকের মৃত্যু

  • বাধাগ্রস্ত অবস্থায় অক্সিজেন সাধ্যহীন হয়ে পড়ে। প্রায় ৪০ মিনিট আটক রাখায় নবজাতক গাড়িতে এন অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করে। অপরাধী দুই চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

৫. পরিবারের প্রতিক্রিয়া

  • স্বজনের মধ্যে রানু আক্তার অভিযোগ করেন, “চালকের কলার ধরে চাবি নিয়ে গেছে, আমাদের অনুরোধ মানেনি, আমাদের বাচ্চা মারা গিয়েছে।”
  • নিহত শিশুর নানি সেফালী বেগম কেঁদে বলেন, “আমাকে দোষ দিতে বললে বলব, আমার নাতিকে বাঁচতে দেয়নি—অক্সিজেন খুলে গেছে।” ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

৬. চালকের বিবৃতি

  • ঢাকাগামী চালক মোশারফ মিয়া জানান, তিনি ট্রিপ নিয়ে শরীয়তপুরে এসেছিলেন, গাড়ি সাইড করেন, রোগীর লোক তাকে five হাজার টাকায় ভাড়া দেন। হাঁক দিলেই চালু করার সময়, স্থানীয় কিছু চালক এসে গাড়ি আটকিয়ে চাবি তুলে নেয় ও তাকে নামিয়ে দেয়। তার কথায়, “আপনারাই রোগী নিয়ে যান” বললে স্বজনরা চান “গাড়িটা আমার”—তবুও তারা ছাড়েনি, ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর শিশু মারা যায়।

৭. পুলিশের পদক্ষেপ

  • পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সিন্ডিকেট বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

প্রেক্ষাপট—অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট: জাতীয় সমস্যা

  • ময়মনসিংহে হাসপাতালকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট
    ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪-এ বাংলা ট্রিবিউনে রিপোর্ট অনুযায়ী, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে কিছু চালক বাইরের অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তোলতে দেয় না এবং অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করে “সিন্ডিকেট” গঠন করে রেখেছে। রোগীরা যেখানে কম খরচে सेवा নেয়ার চেষ্টা করেন, সেখানে সেটি বাধাগ্রস্ত হয়।⏤এই সমস্যার কারণে রোগীর ওয়াইফএ গল্পে অন্তরালের ভোগান্তিও দেখা গেছে।
  • ঢাকা মেডিকেলের দখলদার সিন্ডিকেট
    আগে ২০২৪-এ somoynews-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকশ অ্যাম্বুলেন্স এক ধরনের সিন্ডিকেট গঠন করেছে। এই দখলে রোগীদর্শন, প্রবেশ পথ, জরুরি চিকিৎসা সেবা বিলম্বিত হচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবনা

  1. জীবনের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অকল্যাণ
    অ্যাম্বুলেন্স—জীবনের সেবা কেন্দ্র—সিন্ডিকেটের কাছে পরিণত হলে তা শুধুমাত্র সেবা না, বরং মৃত্যু-বাণিজ্যে পরিণত হয়, যা মানবতাবিরোধী।
  2. আইনি শাসন প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা সক্রিয় করা
    • জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ নিয়ন্ত্রণ, দ্রুত অপারেটিভ ইনস্পেকশন, ও নিয়মিত নজরদারি করতে হবে।
    • সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃঢ় আইনগত ব্যবস্থা—এমন কি মানহানিফুল শাস্তিও প্রযোজ্য হতে পারে।
  3. সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক গঠন
    • হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের উচিত একটি নিবন্ধিত, দায়িত্বশীল অ্যাম্বুলেন্স ইউনিট পরিচালনা—সরকারি বা সমিতির অধীনে, যার কার্যক্রম নিরীক্ষণীয় ও ট্র্যান্সপারেন্ট।
    • অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড নির্ধারণ, লাইসেন্স পদ্ধতি, জরুরিতা ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
  4. সচেতনতা ও জনস্বাস্থ্য কমিউনিকেশন
    • রোগী ও স্বজনদের জানার অধিকার—কোথা থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাবে, সেবা খরচ কত, কোন‐কে যোগাযোগ করা উচিত—এগুলি সচেতন করে ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন।
    • স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, সামাজিক প্রচারণা ও কমিউনিটি লেভেলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা উচিত।
  5. বিধি-নিয়মানুবর্তিতা
    কর্তৃপক্ষকে ব্যাপকভাবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে—অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা।

শ্রীয়তপুরে ঘটে যাওয়া এই ভয়ানক ঘটনাটি একটি মর্মান্তিক প্রতীক—অ্যাম্বুলেন্স-সিন্ডিকেট যখন মানুষের জীবন জরুরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই সময় আইন, নৈতিকতা এবং মানুষের অধিকার সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এই ধরনের অপরাধ যদি দায়মুক্ত থেকে যায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে “আশা” ও “সেবা” প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ণ হয়।

MAH – 12323 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button