বাংলাদেশ

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ

Advertisement

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়ভিত্তিক অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের ভাতা এবং প্রশিক্ষক সম্মানী সম্প্রতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন হার নির্ধারণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাতা পাবেন এবং প্রশিক্ষকরা আগের চেয়ে ১ হাজার ১০০ টাকা বেশি সম্মানী পাবেন।

নতুন ভাতা ও সম্মানীর বিস্তারিত

প্রজ্ঞাপনের মূল প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, তৃতীয় গ্রেড বা যুগ্ম সচিব এবং তার উপরের স্তরের কর্মচারীরা প্রতি ঘণ্টার সেশনে প্রশিক্ষক হিসেবে ৩ হাজার ৬০০ টাকা পাবেন। এটি ২০১৯ সালের মে মাসে নির্ধারিত ২ হাজার ৫০০ টাকার চেয়ে ১ হাজার ১০০ টাকা বেশি।

চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেড বা উপসচিব এবং নীচের পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি ঘণ্টায় ৩ হাজার টাকা পাবেন। আগের হারের তুলনায় এটি ১ হাজার টাকা বেশি। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতিদিনের ভাতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রেড-৯ থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ টাকা পাবেন, যেখানে আগে ছিল ৬০০ টাকা। গ্রেড-১০ এবং তার নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রতিদিনের ভাতা ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের ৫০০ টাকার দ্বিগুণ।

কোর্স পরিচালকের সম্মানী প্রতিদিনের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২ হাজার টাকা, কোর্স সমন্বয়কের সম্মানী ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং সাপোর্ট স্টাফদের সম্মানী ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের শর্তাবলী

প্রজ্ঞাপনে কিছু শর্তও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, এই ভাতা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের নিজস্ব কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত, মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য সদর দপ্তর থেকে আয়োজিত প্রশিক্ষণে এই ভাতা প্রযোজ্য হবে না। তৃতীয়ত, প্রশিক্ষণের সময়কাল যদি দিনব্যাপী না হয়, তবে দুপুরের খাবারের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হবে না। এছাড়া, প্রকল্পভিত্তিক প্রশিক্ষণে এই নতুন হার প্রযোজ্য নয়।

প্রজ্ঞাপনে গ্রেড বলতে মূল (সাবস্ট্যানটিভ) গ্রেড বোঝানো হয়েছে এবং আদেশ জারির তারিখ থেকে নতুন হার কার্যকর হবে।

পেছনের প্রেক্ষাপট

প্রশিক্ষণ ভাতা বৃদ্ধির আগে, প্রশিক্ষণার্থীরা এবং প্রশিক্ষকরা দীর্ঘ সময় ধরে কম হারে ভাতা ও সম্মানী পেতেন। ২০১৯ সালের মে মাসের পূর্ববর্তী হারে, তৃতীয় গ্রেড ও তার উপরের কর্মকর্তারা প্রতি ঘণ্টার জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রশিক্ষক সম্মানী পেতেন, যা আজকের তুলনায় কম। এর আগে ২০১৫ সালের পূর্বে এই হার ছিল মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা।

সরকারের এই নতুন প্রজ্ঞাপন প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াকে আরও আকর্ষণীয় এবং কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্য বহন করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশিক্ষণে পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক উদ্দীপনা থাকলে কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া

নতুন ভাতা ও সম্মানী বৃদ্ধির ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষত মধ্যম ও নীচের পর্যায়ের কর্মচারীরা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ ভাতা পাওয়ায় তাদের উৎসাহ ও মনোবল বৃদ্ধি পাবে।

অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করছেন, সরকারি খাতে এই ধরনের সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে অবদান রাখবে। অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, বাজেটে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, তবে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মানোন্নয়নের দিক থেকে ইতিবাচক।

পরিসংখ্যান

বর্তমান হার এবং পুরনো হারের তুলনা করা হলে দেখা যায়, তৃতীয় গ্রেড বা যুগ্ম সচিবদের জন্য প্রতি ঘণ্টার প্রশিক্ষক সম্মানী ১ হাজার ১০০ টাকা বেড়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেডের জন্য ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের দৈনিক ভাতাও দ্বিগুণ হয়েছে। কোর্স পরিচালকের সম্মানী ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ আরও উৎসাহজনক করবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ও সময়মত কার্যক্রম সম্পন্ন করার মান উন্নত হবে। সরকারি কর্মকর্তারা আরও মনোযোগ দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারলে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সেবার মানোন্নয়ন সম্ভব।

অর্থমন্ত্রী বা অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, এই নতুন প্রজ্ঞাপন সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও সমন্বিত করবে।

সারসংক্ষেপ  

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ভাতা এবং প্রশিক্ষক সম্মানী বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও সরকারি কর্মচারীদের উৎসাহ বৃদ্ধির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। আগামী দিনে এর প্রভাব কীভাবে পড়বে, তা সরকারের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করবে।

এম আর এম – ০৮৭০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button