আঞ্চলিক

নেত্রকোণায় স্ত্রীকে বাঁচাতে অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ হারালেন স্বামী

Advertisement

নেত্রকোণার কলমাকান্দায় এক অদ্ভুত ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আছর উদ্দিন (৪০)। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে লেঙ্গুরা বাজার এলাকায়, যেখানে তিনি তড়িঘড়ি করে স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে অটোরিকশা থেকে লাফ দেন এবং গুরুতর আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। নিহত আছর উদ্দিন খারনই ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের বাসিন্দা।

দুর্ঘটনার বিস্তারিত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আছর উদ্দিনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার (৩০) মানসিকভাবে অসুস্থ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আছর উদ্দিন তার বড় ভাই মনির হোসেনের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় স্ত্রীকে বাবার বাড়ি কেবলপুর গ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

পথে লেঙ্গুরা বাজার অতিক্রম করার সময় শাহিনা হঠাৎ অটোরিকশা থেকে লাফ দেন। স্ত্রীকে বাঁচাতে আছর উদ্দিনও তৎক্ষণাৎ লাফ দেন, কিন্তু তিনি সড়কের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর বড় ভাই মনির হোসেন ও স্থানীয়রা তাকে দ্রুত কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পৌঁছায়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে লাশ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট

নিহত আছর উদ্দিন একজন সহমর্মী স্বামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, তিনি সবসময় স্ত্রীকে নিরাপদ রাখতে চেষ্টা করতেন। তবে শাহিনার মানসিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত এই ধরনের আচরণ তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

স্থানীয়দের মতে, এই দুর্ঘটনা এলাকার মানুষকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, “আছর উদ্দিন তার স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য নিজেই জীবন বাজি রেখেছেন। এটি সত্যিই হৃদয়বিদারক।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা শোক প্রকাশ করেছেন এবং আছর উদ্দিনের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। অনেকেই বলেন, তার এই ত্যাগ সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।

একজন প্রতিবেশী বলেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা সচরাচর হয় না। আছর উদ্দিন তার স্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা সত্যিই অনন্য।”

স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্ব

এ ধরনের ঘটনা মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের সাথে যাত্রার সময় অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য জনপরিবহন বা ছোট যানবাহন ব্যবহারের সময় পরিবারকে আরও বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে।

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানান, গুরুতর আহত রোগীকে যথাসময়ে হাসপাতালে আনা সত্ত্বেও আছর উদ্দিনকে বাঁচানো যায়নি। এই দুর্ঘটনা পরিবার ও স্থানীয় সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনগত প্রক্রিয়া

কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চাই।”

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, জনসচেতনতা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কমাতে পারে।

সমাপনী মন্তব্য

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের শেখায়, পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আছর উদ্দিনের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের ঘটনা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

এম আর এম – ০৮৬৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button