বিশ্ব

পারমাণবিক অস্ত্রের যৌথ মহড়া চালাবে রাশিয়া-বেলারুশ

Advertisement

প্রতিবেশী দেশ বেলারুশের সাথে যৌথভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া। আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বেলারুশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ দিনব্যাপী সামরিক মহড়া ‘জাপাদ ২০২৫’। এই মহড়ায় রাশিয়া ও বেলারুশের মিলিত সামরিক বাহিনী অংশ নেবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ও আধুনিক হাইপারসনিক প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে।

বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার (১৩ আগস্ট) বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে। মহড়া সংক্রান্ত এই ঘোষণার সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিমণ্ডলে নানা প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মহড়ার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা

‘জাপাদ ২০২৫’ মহড়ার মূল লক্ষ্য হলো দু’দেশের সামরিক সমন্বয় বৃদ্ধি এবং আধুনিক হুমকি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া। মহড়ায় অংশগ্রহণকারী সেনারা বিভিন্ন যুদ্ধ কৌশল, কৌশলগত রণকৌশল ও বাস্তব সময়ের পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ নেবেন।

বিশেষভাবে, মহড়ার মধ্যে রাশিয়ার নতুন ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে। এটি মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা শব্দের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ দ্রুত গতিতে ছুটতে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটি একসঙ্গে ছয়টি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং ৩,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো বাধা ছাড়াই গমনযোগ্য। মস্কো দাবি করছে, বিশ্বের আর কোনো দেশের কাছে এমন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র নেই।

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ইতিহাস

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো গত বছরের নভেম্বরে ইউক্রেনে ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এটিকে রাশিয়ার সামরিক শক্তির একটি নতুন দিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেলারুশে এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা দু’দেশের যৌথ সামরিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের যৌথ মহড়া রাশিয়ার পারমাণবিক স্ট্র্যাটেজি প্রদর্শনের পাশাপাশি ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার ওপর একটি প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া-বেলারুশ যৌথ পারমাণবিক মহড়ার খবর বিশ্বমঞ্চে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ন্যাটো এবং পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ এটি ইউরোপীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে মহড়ার সময়সীমা ও রাশিয়ার আধুনিক হাইপারসনিক অস্ত্র ব্যবহার, পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া এই মহড়ার মাধ্যমে নিজেদের সামরিক শক্তি এবং পারমাণবিক সক্ষমতা প্রদর্শন করতে চায়। একই সঙ্গে, বেলারুশকে সামরিকভাবে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার লক্ষ্যও রয়েছে।

বেলারুশের ভূমিকা

বেলারুশ দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশটি বিভিন্ন সময় রাশিয়ার সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করেছে, যার মধ্যে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালের মহড়াগুলো উল্লেখযোগ্য। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়ায় বেলারুশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রযুক্তি, সামরিক কৌশল ও রণবিভাগের সক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, “আমাদের যৌথ মহড়া কেবল প্রতিরক্ষা নয়, এটি আমাদের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক। আমরা রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে চাই।”

মহড়ার কৌশলগত দিক

মহড়ার পরিকল্পনায় রয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা, আকাশ-সীমা প্রতিরক্ষা, এবং স্থল ও জলসীমার কৌশলগত সমন্বয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া ও বেলারুশ এই মহড়ার মাধ্যমে কৌশলগত হাইপারসনিক অস্ত্রের বাস্তব প্রয়োগ এবং পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলার ক্ষমতা যাচাই করবে।

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও মহড়ায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র এবং সেনা প্রযুক্তি প্রদর্শিত হবে। এতে ড্রোন, রাডার, সাইবার যুদ্ধ কৌশল এবং আধুনিক ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

রাশিয়ার সামরিক কৌশল

রাশিয়ার সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই যৌথ মহড়া তাদের পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করার একটি মাধ্যম। রাশিয়া ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি এবং পারমাণবিক সক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

মস্কোর সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, মহড়ায় রাশিয়ার আধুনিক প্রযুক্তি ও ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই করা হবে। মহড়ার মূল লক্ষ্য হলো যৌথ প্রতিরক্ষা কৌশল, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি

সম্ভাব্য প্রভাব

বিশ্বের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-বেলারুশ যৌথ মহড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো সতর্ক অবস্থানে থাকবে।

এই মহড়া বিশ্বকে দেখাবে যে, রাশিয়া শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা নয়, বরং আক্রমণাত্মক কৌশলেও সক্ষম। একই সঙ্গে বেলারুশকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করার মাধ্যমে রাশিয়া তাদের পশ্চিমা সীমান্তে প্রভাব বাড়াতে চায়

‘জাপাদ ২০২৫’ যৌথ সামরিক মহড়া রাশিয়া ও বেলারুশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রদর্শন করবে। মহড়ার মাধ্যমে পারমাণবিক ক্ষমতা, আধুনিক অস্ত্র প্রযুক্তি এবং কৌশলগত সমন্বয় যাচাই হবে।

বিশ্বব্যাপী এটি রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহড়ার ফলে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক কৌশল ও প্রতিরক্ষা নীতি আরও দৃঢ় হবে।

বেলারুশের ভূমিকা এই মহড়ায় কেবল সহযোগী নয়, বরং এটি তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি সুযোগ। ফলে আগামী সেপ্টেম্বরের মহড়ার ফলাফল আন্তর্জাতিকভাবে নজরকাড়া এবং প্রভাবশালী হতে চলেছে।

MAH – 12314 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button