আঞ্চলিক

ঘরে পড়ে আছে স্ত্রীর লাশ, দুই সন্তান নিয়ে পালিয়েছে স্বামী

Advertisement

গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মোছা আসমা আক্তার (৩৫) নামে এক নারী তার বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তার স্বামী দুই সন্তানকে নিয়ে পলাতক রয়েছে। ঘটনাটি শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে ঘটেছে।

ঘটনাস্থল ও লাশ উদ্ধার

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে স্থানীয়রা ঘরে ঢুকে দেখেন আসমা আক্তারের লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আশপাশের মানুষ জানান, কয়েকদিন ধরে দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। স্থানীয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায় স্বামী স্ত্রীর শ্বাসরোধ করে হত্যার পর দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান। আমরা দ্রুত তাদের খোঁজ করার চেষ্টা করছি।”

নিহত আসমা আক্তারের পরিচয়

আসমা নেত্রকোণার সদর উপজেলার পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের মো. সবুজ মিয়ার মেয়ে। তিনি শ্রীপুরের কেওয়া পূর্বখণ্ডে ভাড়াবাড়িতে স্বামী আব্দুল রশিদের সঙ্গে বসবাস করতেন। আসমা স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের দম্পতির দুই শিশু সন্তান রয়েছে।

মৃতের ছোট বোন আরিফা আক্তার জানান, “কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম, দুলাভাই আরও একটি বিয়ে করেছেন। এর পর থেকেই আপাকে মারধর করত। আজ বেলা ১১টার সময় আশপাশের মানুষ আমাদের জানিয়েছে যে দুলাভাই আপাকে খুন করে পালিয়ে গেছেন। দুই শিশুও তার সঙ্গে পালিয়েছে।”

স্বামীর অতীত ও পরিবারের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দুলাভাই আগে দুটি বিয়ে করেছেন। তার বর্তমান সংসারে দুই সন্তানসহ নতুন স্ত্রী রয়েছে। পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন, স্বামী অপ্রাপ্তবয়সী শিশুরা ও স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চলত। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, ছোট স্ত্রীসহ স্বামী রাতের অন্ধকারে বাসায় এসে আসমাকে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পুলিশ ও আইনগত পদক্ষেপ

শ্রীপুর থানার পুলিশ এখন মূলত দুলাভাই ও তার সঙ্গে থাকা দুই শিশুর খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য দেশীয় আইন অনুসারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তি গ্রেফতার হয়নি।

সমাজে প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

স্থানীয় বাসিন্দারা এই হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, “মেয়েদের নিরাপত্তা এখনো বাড়িতে থেকেও নিশ্চিত নয়। এমন ঘটনা আমাদের সমাজে মারাত্মক উদ্বেগের বিষয়।” সামাজিক সংগঠনগুলোও দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

শিশুদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যত

ঘটনার সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো দুই শিশু। শিশু অধিকার সংস্থাগুলি বলছে, “দুই শিশুর নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে নেওয়া প্রয়োজন।” শিশুদের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, “এ ধরনের পারিবারিক হত্যা সাধারণত গোপন মনোমালিন্য ও মানসিক অস্থিরতার ফল। সমাজ ও আইন প্রণয়নের পর্যায়ে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা কমবে না।”

শেষাংশ

এই হত্যাকাণ্ড পুরো এলাকার মানুষকে шক এবং আতঙ্কে রেখেছে। পুলিশ এখন দুলাভাই ও শিশুদের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিবার ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা কঠিন হবে।

এম আর এম – ০৮৪৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button