
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে দেশের আটটি বিভাগেই বিভিন্ন মাত্রার বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে প্রকাশিত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
কোন কোন এলাকায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে
আবহাওয়াবিদদের মতে, বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের কিছু এলাকায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে স্থানীয়ভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।
রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায়ও বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে, তবে তা তুলনামূলক কম হতে পারে। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলেও মাঝে মাঝে বজ্রপাতের ঝুঁকি থাকবে।
লঘুচাপের প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য
লঘুচাপ হল সমুদ্রের পৃষ্ঠে নিম্নচাপের একটি অবস্থা, যা সাধারণত বাতাসের প্রবাহে পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। বঙ্গোপসাগরে এমন লঘুচাপ সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অভ্যন্তরীণ এলাকাগুলোতেও বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের লঘুচাপ মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তাকে আরও তীব্র করে, যা একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি আনতে পারে।
তাপমাত্রার পরিবর্তন
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টির কারণে আগামীকাল থেকেই সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসতে পারে। বর্তমানে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।
এতে গরমের তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পাবে, তবে আর্দ্রতা বেশি থাকায় কিছু এলাকায় ভ্যাপসা অনুভূতি থেকে যেতে পারে।
আগামী পাঁচ দিনের সম্ভাব্য আবহাওয়া
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ দিন ধরেই দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। লঘুচাপ সক্রিয় থাকলে এর প্রভাব ধীরে ধীরে কমে এলেও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে থাকবে।
উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যদিও এখনো সমুদ্রবন্দরে কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি, তবুও হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।
কৃষি ও সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব
এই সময়ের বৃষ্টি ধান, সবজি ও অন্যান্য মৌসুমি ফসলের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যেসব জমিতে সেচের প্রয়োজন ছিল। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় শাকসবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
শহুরে এলাকায় বৃষ্টির কারণে যানজটে ভোগান্তি বাড়তে পারে এবং নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। সেজন্য নগরবাসীকে বৃষ্টির সময় চলাচলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞ মতামত
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “বর্তমান মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনা থাকায় আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হবে। এই সময় বজ্রপাতের ঝুঁকিও রয়েছে, তাই খোলা মাঠে বা উঁচু জায়গায় অবস্থান এড়িয়ে চলা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টির সময় নদী, হাওর ও বিল এলাকায় মাছ ধরতে গেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে।”
শেষ কথা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বাংলাদেশের আটটি বিভাগেই আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এই বৃষ্টি যেমন ফসলের জন্য সুফল বয়ে আনবে, তেমনি শহুরে জলাবদ্ধতা ও বজ্রপাতের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই সকলকে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এম আর এম – ০৮১৫, Signalbd.com