অর্থনীতি

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে, মনোনীত পরিচালক প্রথা নিয়ে অমীমাংসিত অবস্থান

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) পরবর্তী নির্বাচন আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন আয়োজনে ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে সরকার-নিযুক্ত প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।

তবে, পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত পরিচালক প্রথা বহাল থাকবে কি না, এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন খসড়া বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালায় মনোনীত পরিচালক ব্যবস্থা বাতিলের প্রস্তাব রয়েছে। তবে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মনোনীত পরিচালক প্রথা বাতিলের দাবি

বর্তমানে এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদে ৮০ জন সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে ৩৪ জন মনোনীত। এদের মধ্যে ১৭ জন চেম্বার গ্রুপ এবং বাকি ১৭ জন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে আসেন। তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই এই প্রথাকে বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, মনোনীত পরিচালক পদ্ধতি রাখলে প্রভাবশালী গোষ্ঠী এফবিসিসিআই বোর্ডে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে।

সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, “এফবিসিসিআইয়ে ব্যবসায়ীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে স্বতঃস্ফূর্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। মনোনীত পরিচালকের বদলে ক্লাস্টারভিত্তিক পরিচালনা ব্যবস্থা কার্যকর হলে বিভিন্ন খাতের সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।”

অতীত থেকে বর্তমান: প্রথার শুরুর ইতিহাস

১৯৯৪ সালে সালমান এফ রহমান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন সরাসরি ভোটে। তবে ২০০১-০৪ সালে বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিধিমালা পরিবর্তন করে মনোনীত পরিচালক ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ফলে বড় ব্যবসায়িক সংগঠন ও চেম্বারগুলোর নেতারা ভোট ছাড়াই পরিচালনা পর্ষদে আসার সুযোগ পান।

সেই সময়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকাসহ আটটি বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের এফবিসিসিআই বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৮।

তবে, প্রতি বছর মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা এক বা দুইজন করে বাড়তে থাকে। বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদের আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ জনে।

প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আধিপত্য

অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন সমিতি গঠন করে তাদের প্রভাব ব্যবহার করে বোর্ডে মনোনীত পরিচালকের পদ দখল করছেন। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এই প্রথা বাতিলের দাবি তুলেছেন এবং পরিচালনা পর্ষদের আকার ৮০ থেকে ৪০-এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন।

একাধিক ব্যবসায়ী নেতা মনে করেন, মনোনীত পরিচালক প্রথা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা না হলে এফবিসিসিআইতে সঠিক প্রতিযোগিতা ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নতুন বিধিমালা

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা প্রক্রিয়া সংশোধনের লক্ষ্যে নতুন খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি টানা দুবারের বেশি একই পদে থাকতে পারবেন না। তবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা কিছু প্রভাবশালী নেতার চাপের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিধিমালা পাশ করতে বিলম্ব করছে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।

নির্বাচনের মাধ্যমে সংগঠনটির নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে মনোনীত পরিচালকদের প্রথা বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্র হয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের ভবিষ্যৎ

দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক খাতের উন্নয়নে এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা অপরিহার্য। সঠিক নেতৃত্ব ও প্রতিনিধি নির্বাচন এফবিসিসিআইকে আরও কার্যকরী করে তুলবে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আধিপত্য কমে আসবে।

এই নির্বাচন এফবিসিসিআইয়ের জন্য শুধু একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি সংগঠনটির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button