লিটারে ১৯ টাকা কমলো পাম তেলের দাম, সয়াবিন তেল অপরিবর্তিত

দেশের বাজারে পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৯ টাকা কমিয়ে নতুন করে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে সম্ভব হয়েছে। তবে সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত থেকে লিটার প্রতি ১৮৯ টাকা আছে।
দাম কমানোর কারণ ও প্রেক্ষাপট
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম সম্প্রতি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের চাপ ও সরবরাহের ভিত্তিতে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।
তবে সয়াবিন তেলের দাম এখনও কমানো সম্ভব হয়নি কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ভোক্তাদের জন্য সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৮৯ টাকা পর্যায়ে থাকবে।
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের সরবরাহ ও চাহিদার অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে থাকে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের প্রেক্ষাপটে তারা মূল্য সমন্বয়ের সুপারিশ করে। সম্প্রতি কমিশন আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমে আসার তথ্য পেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিটার প্রতি দাম কমানোর সুপারিশ করে।
পাম তেলের দাম কমে কেন?
বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রধানত বিশ্বব্যাপী উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমেছে। এছাড়া কিছু সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি বৃদ্ধির ফলে বাজারে পাম তেলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রাকৃতিকভাবেই কমেছে।
বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব
বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বাজারে পাম অয়েলের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কমানোর ফলে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবর এটি। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মুখে এ ধরনের দাম সমন্বয় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে দৈনন্দিন রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত পাম তেলের মূল্য কমানো গেলে তাদের গৃহস্থালী বাজেটের ওপর চাপ কিছুটা কমবে।
সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত কেন?
অন্যদিকে, সয়াবিন তেলের দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পেছনে কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখনও কমেনি বা স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারেও দাম কমানো সম্ভব হয়নি।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।”
সরকারের মূল্য নীতির লক্ষ্য
সরকার খাদ্য সামগ্রীর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী করার জন্য নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ ও মূল্য সমন্বয় করে থাকে। পাম তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত এরই অংশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোজ্যতেলের বাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার সব সময় সক্রিয় থাকবে। অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করতে কঠোর নজরদারি করা হবে।
আগামী দিনের প্রত্যাশা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি তেলের দাম কমতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম আরও কমে আসতে পারে। এই ক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের দামও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
সাম্প্রতিক বাজারের তথ্য ও পরিসংখ্যান
- পাম অয়েল: আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে দাম প্রায় ১০% কমেছে।
- সয়াবিন তেল: দাম স্থিতিশীল থাকলেও সরবরাহে কিছু অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে।
- বাংলাদেশের বাজার: পাম অয়েলের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমানো হয়েছে, সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে দাম অপরিবর্তিত।
ভোক্তা অধিকার ও নিরাপত্তা
ভোজ্যতেলের বাজারে দাম কমলেও ভোক্তাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে তারা সঠিক মানের পণ্য পান। সরকার ভোজ্যতেল মান নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার দেশের বাজারে পাম অয়েলের দাম লিটার প্রতি ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমে যাওয়ার কারণে। তবে সয়াবিন তেলের দাম এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বাজার পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।
এ ধরনের মূল্য সমন্বয় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে ভোজ্যতেলের দাম আরও সমন্বয় হতে পারে।
MAH – 12273 , Signalbd.com