
আবহাওয়াবিদরা জানান, এই ঝড়টি শক্তিশালী হয়ে দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশকে এখনই তাৎক্ষণিক হুমকির মুখে পড়তে হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ‘ইরিন’— বিস্তারিত
মার্কিন জাতীয় হারিকেন কেন্দ্রের (National Hurricane Center) তথ্যমতে, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের কাছে কাবো ভার্দে দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমে ‘ইরিন’ নামের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়টি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এই ঝড়ের কেন্দ্রস্থল ওয়েস্ট ইন্ডিজের উত্তর লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ২,৩০৫ মাইল পূর্বে অবস্থান করছে।
ঝড়টির বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪৫ মাইল এবং এটি এখনও ঘূর্ণিঝড়ের পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি দ্রুত শক্তিশালী হয়ে আসন্ন দিনগুলোতে আটলান্টিক মহাসাগরে মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঝড়ের সম্ভাব্য গতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ চলছে।
প্রতি বছর আটলান্টিক মহাসাগরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের মৌসুম জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে। এই সময়কালেই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় বা ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি বেশি হয়। ২০২৫ সালের এই মৌসুমে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝড় আসতে পারে।
জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা অনুমান করেছে, এবছর আটলান্টিক অঞ্চলে মোট ১৩ থেকে ১৮টি ঝড়ের নামকরণ হবে, যার মধ্যে ৫ থেকে ৯টি ঝড় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ‘ইরিন’ এই ঝড়গুলোর মধ্যে প্রথমটির সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় হিসেবে গণ্য হতে গেলে, ঝড়ের সর্বোচ্চ টেকসই বাতাসের গতি কমপক্ষে ৩৯ মাইল প্রতি ঘণ্টায় হতে হবে। ‘ইরিন’ এর বাতাসের গতি ইতিমধ্যেই তা অতিক্রম করেছে এবং দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
প্রভাব ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত ‘ইরিন’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করেনি। তবে আটলান্টিক অঞ্চলে বসবাসকারী দেশগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফ্লোরিডা এবং পূর্বতীর দেশগুলোকে ঝড়ের গতি এবং পথ সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট নিতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের পরিবর্তন হতে পারে এবং এটি যদি পশ্চিম দিকে সরে আসে, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া সামুদ্রিক বন্দর ও জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসনও তাদের প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে এবং জনগণকে জরুরি পরিস্থিতির জন্য সচেতন ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ
গত কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝড়ের তীব্রতা বাড়ছে।
২০১৭ সালে আটলান্টিক অঞ্চলে ‘হার্ভে’, ‘মারিয়া’ ও ‘ইর্ভিং’সহ কয়েকটি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল। এই ঝড়গুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির কারণ হয়েছিল।
‘ইরিন’ ঝড়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্কতা দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মৌসুমের প্রথম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ‘ইরিন’ নিয়ে আবহাওয়াবিদ ড. সুমন করিম বলেন, “যদি ‘ইরিন’ ঝড়টি নিয়ন্ত্রিত গতিতে বৃদ্ধি পায়, তবে এটি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “আটলান্টিক অঞ্চলের দেশগুলোকে অবশ্যই ঝড়ের গতিপথ মনিটর করতে হবে এবং জরুরি প্রস্তুতি নিতে হবে।”
শেষ কথা
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় ‘ইরিন’ আটলান্টিক মহাসাগরে নতুন মাত্রা আনতে যাচ্ছে। এটি আসন্ন কয়েক দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং যথাযথ সতর্কতা গ্রহণ না করলে ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘ইরিন’ ঝড়ের গতিপথ ও তীব্রতা কেমন হবে তা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এটি পূর্বভাগে থেকে পশ্চিমদিকে সরে আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই আপাতত এলাকাভিত্তিক প্রশাসন ও জনগণকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত সর্বশেষ আপডেট নিয়মিত অনুসরণ করতে হবে।
এম আর এম – ০৮১২, Signalbd.com