আঞ্চলিক

ট্রাফিক সার্জেন্টকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বলা সেই সহকারী কর কমিশনার বরখাস্ত

ঢাকার পলাশী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার সময় সহকারী কর কমিশনার ফাতেমা বেগমের গালাগালির ঘটনায় ১২ এপ্রিলের ঘটনার তদন্ত শেষে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ ও বরখাস্তের কারণ

২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৮টার সময় ঢাকা মেট্রো-গাড়ি নম্বর ৩৪৫৯০৬ একটি প্রাইভেট কার পলাশী মোড় এলাকায় চলছিল। ট্রাফিক পুলিশ ওই গাড়িটির কাগজপত্র দেখার জন্য আবেদন করলে গাড়ির মালিক তথা কর অঞ্চল-২৫ এর সহকারী কর কমিশনার ফাতেমা বেগম তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহা জামালকে উদ্দেশ্য করে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’, ‘ছোট লোকের বাচ্চা’ ও ‘সারাজীবন ঘুষ খাইছে’ ইত্যাদি গালাগালি করেন।

এ ঘটনায় পরের দিন লালবাগ থানায় তাকে নিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধিমালা অনুযায়ী তাঁর ‘অসদাচরণ’ ধরা পড়ে, যার কারণে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। বিধিমালা অনুসারে ফাতেমা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শৃঙ্খলা বিধিমালা ও বরখাস্তের আইনগত প্রেক্ষাপট

‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩(খ) ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্তব্য পালনে অবহেলা, অবাধ্যতা ও অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে। এই বিধান অনুসারে এই ধরনের আচরণ ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হওয়ায় কর কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বরখাস্তকালে তাকে নিয়ম অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রদান করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনা ও বরখাস্তের পেছনের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের এমন অসদাচরণের ঘটনা নতুন নয়। পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মচারীরা অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার বা দুর্নীতির অভিযোগে শৃঙ্খলাবিধি ভঙ্গের জন্য শাস্তি ভোগ করেছেন। কিন্তু এই ধরনের ঘটনার কারণে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এই প্রেক্ষাপটে কর কমিশনারের বরখাস্ত সিদ্ধান্তকে অনেকেই যথার্থ ও প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। ট্রাফিক পুলিশসহ সাধারণ জনগণও এর ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

সামাজিক ও প্রশাসনিক প্রভাব

এই ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি দপ্তর ও কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা হ্রাস করতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত যথাযথ আচরণ প্রদর্শন করা, যাতে জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।

এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য পালনে সজাগ ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব থাকার সম্ভাবনাও উল্লেখ করেছেন।

ভবিষ্যতের করণীয় ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি

এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শৃঙ্খলা বিধি ও কর্মচারী আচরণ সম্পর্কে আরও কঠোর ও স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অসদাচরণ রোধে কঠোর মনিটরিং ও প্রশিক্ষণ চালানো জরুরি।

সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও আচরণগত সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অপরদিকে, প্রশাসনিক স্তর থেকে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করাই সফল সরকারের লক্ষ্যের অন্যতম অংশ।

এম আর এম – ০৭৮৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button