আঞ্চলিক

পদ্মা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ

Advertisement

রাজধানীর গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাজশাহী থেকে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে যাত্রীরা এবং পথচারীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ঘটনা ও পরিস্থিতির বিস্তারিত

জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি জংশনে প্রবেশের সময় পয়েন্টের ত্রুটির কারণে ব্রডগেজ লাইনে ঢুকে ট্রেনের ইঞ্জিন এবং দুই থেকে তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজশাহী থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে জয়দেবপুর জংশনের ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাদিরুজ্জামান বলেন, “ইঞ্জিনসহ কয়েকটি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে, তাই এই রুট দিয়ে কোনো ট্রেন চলাচল হচ্ছে না। পাশাপাশি শিববাড়ি থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত সড়ক পথও বন্ধ রয়েছে, যার ফলে যাত্রীরা ও স্থানীয়রা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন।”

পূর্ব ঘটনা

বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে মাঝে মাঝে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, যেখানে পয়েন্ট ত্রুটি, রেল লাইনের অবস্থা বা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। গত কয়েক বছরে পদ্মা এক্সপ্রেসসহ দেশের বিভিন্ন ট্রেনে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

রেলের অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মনোযোগ না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে রেল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। জয়দেবপুর জংশনেও বারবার এই ধরনের দুর্ঘটনার অভিযোগ রয়েছে, যা রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে তুলে ধরে।

দুর্ঘটনার প্রভাব ও যাত্রী দুর্ভোগ

পদ্মা এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার যাত্রী দুর্ঘটনার সময় এবং পরে জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রীকে বিকল্প সড়কপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে, যা সড়কে যানজট ও সময় নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিববাড়ি থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকার ফলে যাত্রীদের জন্য ভ্রমণ করাটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনেও ক্ষতি হচ্ছে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ও কর্তৃপক্ষের মতামত

রেল বিশেষজ্ঞরা বলেন, “পয়েন্ট ম্যানেজমেন্ট ও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। দ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধান না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।”

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর দ্রুত রেলপথ সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের ইঞ্জিন ও কোচ সরানোর পাশাপাশি পয়েন্ট সঠিক অবস্থায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। যাত্রীরা ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রেল যোগাযোগ পুনরুদ্ধার

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর দ্রুত রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করতে তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবাটি পুনরায় সচল করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন রেলপথ আধুনিকায়নের কাজ চলছে, তবে এর ফলে দুর্ঘটনা কমেনি বলেই অভিজ্ঞরা মনে করেন। রেলওয়ের আধুনিকীকরণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।

সারসংক্ষেপ  

পদ্মা এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়া দেশের রেল সেবার নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে আবারও সামনে এনেছে। এই পরিস্থিতি যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। রেল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে রেল যোগাযোগের নিরাপত্তা ও আধুনিকায়নের ওপর বেশি মনোযোগ না দিলে এই ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। তাই জরুরি পদক্ষেপ ছাড়া রেলযাত্রীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে, যা দেশের সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য একটি বড় সংকট।

এম আর এম – ০৭৭২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button