ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে বর্ষায় মেনে চলুন চিকিৎসকের ৬টি টিপস

বর্ষার সময় ডেঙ্গুসহ নানা মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। মশার প্রজনন ক্ষেত্রে বর্ষার পানি বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে এডিস মশা, যা ডেঙ্গুর প্রধান বাহক, বর্ষাকালে স্থির পানি জমে থাকা জায়গায় ডিম পাড়ে। ফলে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকরা বর্ষায় ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর টিপস মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই ৬টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
ডেঙ্গুর ঝুঁকি ও বর্ষার প্রভাব
প্রতিবছর বর্ষাকালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। বৃষ্টির পানি জমে থাকা জায়গাগুলোতে এডিস মশার প্রজনন হয়। পানিবাহিত জীবাণু ও মশার কারণে ডেঙ্গু ছাড়াও ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া রোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় আবর্জনা ফেলা, জলাবদ্ধতা ও অপরিষ্কার পরিবেশ ডেঙ্গুর বিস্তার ত্বরান্বিত করে। তাই বর্ষায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সক্রিয় সতর্কতা ও পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৬টি কার্যকর টিপস
১. স্থির পানি দূর করুন
ডেঙ্গু মশার প্রজননের অন্যতম প্রধান কারণ হলো স্থির পানি। বাড়ির আশপাশে এমন কোনও জায়গায় পানি জমে থাকলে তা মশার প্রজননের জন্য আদর্শ স্থান হয়ে দাঁড়ায়। বালতি, ফুলের টব, পুরোনো টায়ার, ড্রেন বা ছাদে জমে থাকা পানি নিয়মিত ফেলে দিন ও পরিষ্কার রাখুন। সপ্তাহে অন্তত একবার এসব জায়গায় পানি পরিবর্তন বা খালি করার মাধ্যমে মশার প্রজনন রোধ করা যায়।
২. মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করুন
বর্ষায় বাইরে বের হওয়ার সময় মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশা প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন। বিশেষ করে ডিইইটি বা লেমন ইউক্যালিপটাস তেল যুক্ত রিপেলেন্ট বেশি কার্যকর। শিশুদের জন্য নিরাপদ রোল-অন বা প্যাচ ব্যবহার করলে আরামদায়ক হয়। ভোরবেলা ও সন্ধ্যার সময় মশার কামড় বেশি হওয়ায় সেই সময় সতর্ক থাকাই ভালো।
৩. সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করুন
বর্ষাকালে বাইরে গেলে শরীরের যতটা সম্ভব অংশ ঢেকে রাখুন। লম্বা হাতা শার্ট, ফুল-লেংথ প্যান্ট, মোজা ও বন্ধ জুতো পরিধান করলে মশার কামড়ের সম্ভাবনা কমে যায়। হালকা রঙের কাপড় পরা ভালো কারণ গবেষণায় দেখা গেছে মশা গাঢ় রঙের কাপড়ের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।
৪. ঘরবাড়িতে মশার জাল ও নেট ব্যবহার করুন
এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই ঘরের জানালা ও দরজায় মশার জাল লাগানো অপরিহার্য। মশার জাল ঠিকমতো বসানো হলে মশা ঢোকা বন্ধ হয় এবং ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করাও এক দীর্ঘদিনের সফল পদ্ধতি। মশারি ভালোভাবে টানটান করে বিছানার চারপাশে বসাতে হবে যেন মশা ঢোকার কোনো সুযোগ না থাকে।
৫. ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো আগে থেকে চিনুন
ডেঙ্গু রোগ দ্রুত শনাক্ত করা গেলে সঠিক চিকিৎসা সহজ হয়। সাধারণত হঠাৎ জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা, শরীরে লাল র্যাশ, বমিভাব ও উদর ব্যথা ডেঙ্গুর লক্ষণ হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়। সময়মতো চিকিৎসা পেলে ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়া সহজ হয়।
৬. পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতায় সম্মিলিত উদ্যোগ নিন
ব্যক্তিগত সতর্কতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা জরুরি। পাড়ায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে স্থির পানি পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ও ডেঙ্গু সতর্কতা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট থাকতে হবে। একসঙ্গে পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্ব
ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমানোর জন্য শুধু নিজেই নয়, পরিবার ও পাড়াপড়শীদের সচেতন হওয়া দরকার। একটি স্থির পানি থাকলেই ডেঙ্গুর প্রজনন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই সবাইকে মিলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রকাশিত সতর্কবার্তা মেনে চললে ডেঙ্গু মোকাবেলায় বড় সফলতা পাওয়া যাবে।
বর্ষার সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ প্রস্তাবনা
বর্ষায় ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে শুধু চিকিৎসা নয়, পূর্বপ্রতিরোধ ও সচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। শহুরে অবকাঠামোর উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত ক্লিনআপ অভিযান চালানো উচিত। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণেও নজর দেওয়া দরকার।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগই একমাত্র পথ। বর্ষার মৌসুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করাই ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার সর্বোত্তম উপায়।
এম আর এম – ০৭৬৯, Signalbd.com