
গাজীপুরে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাত আসামিকে ২ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। নিহত তুহিন স্থানীয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে গত দুই দিনে বিভিন্ন জেলা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বিস্তারিত ও রিমান্ডের সিদ্ধান্ত
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) একটি বিশেষ দল শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত ও শনিবার (৯ আগস্ট) দিনের বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মূল আসামি কেটু মিজান, তার স্ত্রী গোলাপী বেগমসহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
শনিবার দুপুরে আদালতে হাজির করলে তদন্তের স্বার্থে বিচারক তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া সবাই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
শুক্রবার রাতে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে কেটু মিজান, তার স্ত্রী গোলাপী বেগম ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই রাতে উত্তরা তুরাগ এলাকা থেকে আল আমিন এবং হোতাপাড়া এলাকা থেকে স্বাধীনকে আটক করা হয়।
পরদিন শনিবার কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার পুরাতন বাজার থেকে সুমনের সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪। এছাড়া পাবনার পাচবাড়িয়া এলাকা থেকে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং কুমিল্লার হোমনা উপজেলার মো. শাহ জালাল (৩২)–কে ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের দিন কী ঘটেছিল
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনের ওপর হামলা চালায় পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তুহিনকে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ বাঁচাতে ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন।
কিন্তু হামলাকারীরা দোকানে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে তুহিনকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
পরে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত তুহিনের পরিচয় ও সাংবাদিকতা জীবন
আসাদুজ্জামান তুহিন ছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সন্তান।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে থেকে স্থানীয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলেন।
সহকর্মীরা জানান, তুহিন ছিলেন সাহসী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক। স্থানীয় দুর্নীতি ও অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে তিনি নিয়মিত প্রতিবেদন করতেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য
জিএমপি উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, “হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ব্যক্তিগত ও পেশাগত শত্রুতার মিশ্রণেই এ ঘটনা ঘটেছে। রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।”
র্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার এসপি কে এম এ. মামুন খান চিশতী জানান, “ঘটনার পর থেকেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।”
গাজীপুরে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা
গাজীপুরে এর আগেও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা জানান, অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণে সাংবাদিকরা প্রায়ই হুমকির মুখে পড়েন।
তারা দাবি করেছেন, সাংবাদিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
তুহিন হত্যার ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিমান্ড শেষে আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে এবং ঘটনার পেছনে মূল কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
শেষ কথা
তুহিন হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য গভীর আঘাত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ মামলায় কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকলেও তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এখন সবার চোখ আদালত ও তদন্তের অগ্রগতির দিকে—দেখা যাক, ন্যায়বিচার কত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়।
এম আর এম – ০৭৫৯, Signalbd.com