বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় এক বন্দুকধারীর গুলিতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলাকারী হঠাৎ ক্যাম্পাস এলাকায় ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, এবং শুরু হয় গুলি বিনিময়।

হামলার বিস্তারিত

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে হঠাৎ করেই এক বন্দুকধারী প্রবেশ করে। প্রথমেই তিনি লক্ষ্যবস্তু করেন টহলরত পুলিশ কর্মকর্তাদের। গুলিতে গুরুতর আহত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা, যাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে ক্যাম্পাস সংলগ্ন একটি ভবনে সন্দেহভাজন হামলাকারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন নাকি আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গুলির শব্দ শোনা মাত্র তারা শ্রেণিকক্ষ ও অফিসে আশ্রয় নেন। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটা হয়তো আতশবাজির শব্দ, কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারি গুলি চলছে। সবাই ভয়ে দৌড়ে আশ্রয় নিতে শুরু করে।” ক্যাম্পাস প্রশাসন দ্রুত জরুরি সতর্কতা জারি করে শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দেয়।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত

আটলান্টা পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং হামলার কারণ খুঁজে বের করতে একাধিক গোয়েন্দা দল কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারীর ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি অস্ত্র ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা হামলার ক্রমধারা বিশ্লেষণে সহায়ক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

মাত্র তিন দিন আগে জর্জিয়ার ফোর্ট স্টুয়ার্ট সামরিক ঘাঁটিতে আরেকটি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে পাঁচজন সেনা সদস্য আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা দীর্ঘদিনের একটি বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরই এখন পর্যন্ত শতাধিক গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বহু সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা থামানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “প্রতি কয়েক সপ্তাহ অন্তর নতুন কোনো বন্দুক হামলার খবর আমরা পাচ্ছি। কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া এই প্রবণতা থামানো সম্ভব নয়।” এছাড়া, স্থানীয় সম্প্রদায় নেতারাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া

আটলান্টার বাসিন্দারা এ ঘটনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা উচিত। কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, তারা এখন সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘটনার নিন্দা জানানো হচ্ছে, এবং অনেকেই নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

সারসংক্ষেপ  

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এই হামলা আবারও প্রমাণ করল যে, শিক্ষা ও জনসমাগমস্থলও নিরাপদ নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কবে নাগাদ কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হবে এবং এসব প্রাণহানির ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে?

এম আর এম – ০৭৫৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button