পেঁয়াজ ও সবজির দাম বৃদ্ধি: বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি

পেঁয়াজের দাম ৮০–৮৫ টাকা, সবজির দামও চড়া
বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে, প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়ে ১০ টাকা হয়েছে। এছাড়া, বেশিরভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া।
বাজারের পরিস্থিতি
খুচরা বিক্রেতাদের মতে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে এবং ডিমের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু সরবরাহ বাড়েনি। এই কারণে পণ্য দুটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন বাজারে গতকাল এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কেনা যেত। তবে হঠাৎ করে কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়ে গেছে।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, যার ফলে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। বৃষ্টির কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবজির দাম
করলা, কাঁকরোল, বরবটি সহ বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে, বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে। গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে সবজির দাম চড়া হয়ে উঠেছে। যেমন, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা।
মুরগির ডিমের দাম
সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা। তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে আগের চেয়ে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে এ দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম ছিল।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি
মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টানা চার মাস কমার পর মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জুনে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্ষা ও বন্যার মৌসুমের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি
জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারের মৌলিক বিষয়
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এই সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আশা করা যায়, শীঘ্রই বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য জীবনযাত্রা সহজ হবে।
MAH – 12193 , Signalbd.com