কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে জামায়াত, ৭ দফা ঘোষণা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় এবং ঘোষণা করা হয় সাত দফা দাবি।
বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজনৈতিক সংকট
সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যান্য নায়েবে আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা।
বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনগণের অধিকার হরণ, এবং চলমান দমন-পীড়ন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আলোচনা হয় জুলাই ও আগস্ট মাসে সংগঠিত গণজাগরণমূলক আন্দোলন এবং তার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে।
ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জুলাই সনদের ওপর জোর
জামায়াত নেতারা বৈঠকে বলেন, জুলাই-অভ্যুত্থান ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বৈঠকে আলোচিত হয় ‘জুলাই সনদ’ এবং এর বাস্তবায়ন। দলের মতে, এই সনদে রয়েছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার রূপরেখা, যা আগাম নির্বাচনের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ভিত্তি হতে পারে।
তারা বলেন, নির্বাচন অবশ্যই “জুলাই সনদ”-এর আলোকে হতে হবে, এবং জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে হলে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
ঘোষিত ৭ দফা দাবি কী কী?
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জরুরি বৈঠকে যে সাতটি দাবি পেশ করা হয়েছে, তা হলো:
- ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী গণহত্যাগুলোর বিচার: সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
- রাষ্ট্রীয় মৌলিক সংস্কার: প্রশাসন, নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থায় কার্যকর সংস্কার আনতে হবে।
- জুলাই সনদের বাস্তবায়ন: ঐতিহাসিক “জুলাই সনদ” এবং ঘোষণাপত্র পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- আন্দোলনে নিহতদের পুনর্বাসন: শহীদ ও আহতদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
- PR পদ্ধতিতে নির্বাচন: ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত তুলে ধরতে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু করতে হবে।
- প্রবাসীদের ভোটাধিকার: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রযোজ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড: সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনী মাঠে।
কেন জরুরি এই বৈঠক?
গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিরোধী দলগুলোর উপর দমন-পীড়ন, আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ দেশব্যাপী আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এরই প্রেক্ষিতে জামায়াত তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে এই জরুরি বৈঠক আহ্বান করে।
এর আগে জুলাই মাসে সংঘটিত কয়েকটি বড় আন্দোলনে জামায়াতের কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। সে প্রেক্ষিতে এই ৭ দফা দাবি উত্থাপন দলটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচির ইঙ্গিত দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতে ইসলামীর এই ঘোষণার মাধ্যমে দলটি আবারও রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় অবস্থান নিতে চাইছে। তবে বর্তমানে দলটির রাজনৈতিক বৈধতা ও জনপ্রিয়তা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তাদের ধারাবাহিক সাংগঠনিক কর্মসূচি এবং অবস্থান জনগণের একটি অংশের মধ্যে প্রভাব ফেলছে বলে অনেকে মনে করছেন।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “জামায়াত যদি বৃহত্তর বিরোধী জোটে যুক্ত হয় এবং ৭ দফাকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে আনতে পারে, তাহলে তা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।”
শেষ কথা
জামায়াতে ইসলামীর এই জরুরি বৈঠক ও সাত দফা ঘোষণার মাধ্যমে দলটি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে তারা ভবিষ্যতে কেমনভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে এবং এই দাবিগুলো কিভাবে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হবে — তা সময়ই বলে দেবে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০৭৫২, Signalbd.com