
পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে জানা যায়, জাহান্নামে কাফের ও পাপীদের জন্য অপেক্ষা করছে এমন কঠিন শাস্তি, যা শুধু আগুনে জ্বালানি নয়, বরং তাদের বিছানা ও পোশাকেও ফুটে উঠবে। আগুন, আলকাতরা এবং কঠিন যন্ত্রণার মাধ্যমে এই সাজা বাস্তবায়ন করা হবে। আজকের প্রতিবেদন জাহান্নামীদের সেই শয্যা ও পোশাক সম্পর্কে বিশদভাবে তুলে ধরছে।
জাহান্নামীদের পোশাক: আগুন ও আলকাতরার শাস্তি
কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ আছে, যারা আল্লাহকে অমান্য করে এবং কুফরী করে, তাদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করা হবে।
সূরা হজ্জ (আয়াত ১৯)-এ বলা হয়েছে:
“কিন্তু যারা কুফরী করেছে, তাদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করা হবে; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে উত্তপ্ত পানি।”
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, জাহান্নামে কুফরকারীদের পোশাক হবে অগ্নিতে নির্মিত। এটি তাদের শরীরকে পুড়িয়ে দেবে এবং শাস্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে।
আলকাতরার পোশাক ও আগুনে মোড়ানো মুখমণ্ডল
আরেকটি ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায় সূরা ইবরাহীম (আয়াত ৫০)-এ। সেখানে বলা হয়েছে:
“তাদের পোশাক হবে আলকাতরার, এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।”
আলকাতরা এক ধরনের গাঢ় কালো পদার্থ, যা অত্যন্ত দাহ্য ও দুর্গন্ধযুক্ত। এই আলকাতরাই জাহান্নামীদের পোশাকের অংশ হবে। এটি শরীরে পরা তো দূরের কথা, সাধারণ অবস্থাতেও ছুঁয়ে দেখার মতো নয়। কিন্তু জাহান্নামে এর দ্বারা শরীরকে ঢেকে রাখা হবে।
এছাড়া, আগুন তাদের চেহারাকে এমনভাবে ঢেকে ফেলবে যে, তারা মুক্তির জন্য চিৎকার করবে, কিন্তু সে আর্তনাদও সেখানে কাজে আসবে না।
আগুনের বিছানা ও উপরের আগুনের চাদর
শুধু পোশাক নয়, জাহান্নামীদের শোবার ব্যবস্থাও হবে যন্ত্রণার প্রতীক।
সূরা আল-আ’রাফ (আয়াত ৪১)-এ বলা হয়েছে:
“জাহান্নামের আগুন হবে তাদের বিছানা এবং তাদের উপরেও থাকবে ভাঁজের উপর ভাঁজ করা আগুনের চাদর বা আচ্ছাদন।”
অর্থাৎ, নিচে থাকবে আগুনের বিছানা, আর উপরে আগুনে তৈরি চাদর—একেবারে আগুনের মধ্যে আটকে রাখা হবে জাহান্নামীদের। চারদিক থেকে আগুনে মোড়ানো এই অবস্থার ভয়াবহতা কল্পনা করাও দুঃসহ।
হাদিসে জাহান্নামীদের পোশাকের বর্ণনা
রাসুলুল্লাহ (সা.) জাহান্নামীদের পোশাক ও পরিস্থিতি সম্পর্কে হাদিসে পরিষ্কারভাবে সতর্ক করেছেন।
সহীহ মুসলিম (হাদিস ৯৩৪)-এ বর্ণিত হয়েছে:
“নাইহা (বিলাপকারী নারী) যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে উঠানো হবে যে, তার গায়ে থাকবে আলকাতরার চাদর এবং চামড়ার খসখসে ওড়না।”
এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, জাহান্নামে শুধু কাফের নয়, এমন মুসলমানরাও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে যারা গুরুতর গোনাহ করে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে।
জাহান্নামের শাস্তির উদ্দেশ্য ও বার্তা
জাহান্নামের এই কঠিন ও ভয়ংকর শাস্তিগুলোর পেছনে রয়েছে স্পষ্ট বার্তা: আল্লাহর অবাধ্যতা করলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। এই শাস্তিগুলো শুধু কল্পনাই নয়, বরং প্রতিটি অপরাধীর জন্য বাস্তব রূপে অপেক্ষা করছে। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি কোনো কাহিনি নয়, বরং মানবজাতির জন্য এক চরম সতর্কবার্তা।
জান্নাতের বিপরীতে জাহান্নামের জীবনযাপন
জান্নাতে যেমন রয়েছে শান্তি, প্রশান্তি, দুধ-শরবত-ফলমূল, বিলাসবহুল বসবাস ও পোশাক, তেমনি জাহান্নামে এর ঠিক বিপরীত চিত্র।
- সেখানে থাকবে আগুনের বিছানা
- পোশাক হবে আলকাতরা ও আগুনের
- খাদ্য হবে যাক্কুম গাছের ফল এবং রক্ত-মিশ্রিত পানি
- বাতাস হবে দহনযোগ্য গরম
এ এক চিরস্থায়ী আতঙ্কের জীবন।
শেষ কথা
ইসলাম ধর্মে জান্নাত যেমন পুরস্কারের স্থান, তেমনি জাহান্নাম পাপীদের জন্য কঠিন শাস্তির জায়গা। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাহান্নামের ভয়াবহতা যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনই সেখানে বসবাসকারীদের জীবনযাপন, পোশাক ও বিছানার কথাও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো—জাহান্নামীদের বিছানা ও পোশাক কেমন হবে।
জাহান্নামীদের বিছানা ও পোশাক কেমন হবে—এ নিয়ে কোরআন ও হাদিসে বহু স্পষ্ট ও শক্তিশালী বর্ণনা রয়েছে। এসব শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করা এবং তাদেরকে গোনাহ থেকে বিরত রাখা। আজকের এই বার্তাটি যেন প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে গভীরভাবে পৌঁছে যায় এবং সবাই যেন নিজেদের জীবন সংশোধনের দিকে এগিয়ে যায়।
এম আর এম – ০৭৪৯, Signalbd.com