বানিজ্য

পাল্টা শুল্ক কার্যকর: বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রতিযোগিতা

Advertisement

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার ফলে দেশের পণ্য রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করব পাল্টা শুল্কের প্রভাব, বাংলাদেশের অবস্থান এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিস্থিতি।

পাল্টা শুল্কের কার্যকরী প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস আজ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে শুল্কের বোঝা বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ সুতির টি-শার্টের ক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ১৬.৫ শতাংশ শুল্ক আদায় করত। এখন, এই শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক, যা রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

টি-শার্টের শুল্কের বিশ্লেষণ

গত বছর বাংলাদেশ থেকে একটি টি-শার্টের রপ্তানি মূল্য ছিল ১ ডলার ৬২ সেন্ট। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আদায় করেছে ২৭ সেন্ট। নতুন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে, আমদানিকারকদের গড়ে ৫৯ সেন্ট শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।

প্রতিযোগিতার চিত্র

বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো হলো ভারত, ভিয়েতনাম এবং চীন।

ভারত

ভারতের টি-শার্টের গড় রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ভারত থেকে একটি টি-শার্টের জন্য মোট শুল্ক দিতে হবে ১ ডলার ২৫ সেন্ট।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে, তাদের প্রতি টি-শার্টে গড় শুল্ক দিতে হবে ৯৮ সেন্ট।

চীন

চীন বাংলাদেশের তুলনায় কম দামে টি-শার্ট রপ্তানি করে। তবে, তাদের ওপর ৩০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপিত হলে, চীনের প্রতিটি টি-শার্টের জন্য শুল্ক দিতে হবে ৮২ সেন্ট।

নতুন প্রতিযোগী

মিয়ানমার এবং ইথিওপিয়া এক সময় বাংলাদেশের জন্য হুমকি মনে করা হতো। তবে, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপিত হওয়ায় তাদের রপ্তানি খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইথিওপিয়াও বাণিজ্য সুবিধা হারানোর কারণে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে গেছে।

বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৭৬০ কোটি ডলার ছিল তৈরি পোশাক। নতুন পাল্টা শুল্ক যুক্ত হওয়ার পর, বাংলাদেশের গড় কার্যকর শুল্কহার বাড়বে, তবে তা এখনও ভিয়েতনামের সমান থাকবে।

রপ্তানিকারকদের মতামত

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, “আমরা ভারত ও চীনের তুলনায় এগিয়ে আছি। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং কম্বোডিয়ার তুলনায় আমাদের শুল্ক হার সামান্য বেশি হলেও, আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে আছি।”

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য পাল্টা শুল্ক একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। তবে, দেশের রপ্তানিকারকরা আশাবাদী যে তারা এই পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে, বাংলাদেশকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনের। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।

MAH – 12175 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button