বিশ্ব

আল-আকসায় ঢুকতে পারবেন না জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি, নিষেধাজ্ঞা দিলো ইসরায়েল

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জুমার খুতবায় বক্তব্য দেওয়া এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানানোয় জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ হুসেনকে আল-আকসা মসজিদে ছয় মাসের জন্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েল। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

কী ঘটেছে: মুফতির বিরুদ্ধে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা

ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে সরাসরি এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ হুসেন ছয় মাস পর্যন্ত আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করতে পারবেন না। এর আগে তাকে আট দিনের জন্য মসজিদ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা শেষ হওয়ার পরই এই দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদসূত্র বলছে, গত শুক্রবার দেওয়া জুমার খুতবায় মুফতি গাজায় চলমান মানবিক সংকট, বিশেষ করে অনাহারের চিত্র তুলে ধরে ইসরায়েলি নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এরপরই তার বিরুদ্ধে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

পেছনের প্রেক্ষাপট: আগেও নজরদারিতে ছিলেন গ্র্যান্ড মুফতি

গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মুহাম্মদ হুসেন দীর্ঘদিন ধরেই আল-আকসা মসজিদে খুতবা ও ইসলামিক দাওয়াহ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বহুবারই তাকে বিতর্কিত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

২০২০ সালেও তিনি রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে নজরদারির মধ্যে পড়েন। ২০২৩ সালে একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে সাময়িকভাবে গ্রেপ্তারও করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি ধর্মীয় মঞ্চকে রাজনৈতিক বার্তার জন্য ব্যবহার করছেন।

আল-আকসা মসজিদের গুরুত্ব এবং ‘স্থিতাবস্থা চুক্তি’

আল-আকসা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় পবিত্র স্থান। এটি শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে সম্মানের প্রতীক।

১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর এক ‘স্থিতাবস্থা চুক্তি’ অনুসারে আল-আকসা মসজিদের প্রশাসনিক দায়িত্ব জর্ডানের ওয়াকফ কাউন্সিলের হাতে থাকে এবং অমুসলিমদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি কট্টরপন্থী নেতাদের আগমন, পুলিশের তল্লাশি এবং মসজিদে ইহুদি তীর্থযাত্রীদের প্রবেশের ঘটনাগুলো এই স্থিতাবস্থার চরম লঙ্ঘন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইতামার বেন-গভিরের বিতর্কিত ভূমিকা

ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ইতোমধ্যেই চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে নামাজ পড়াসহ একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

তার এই কর্মকাণ্ডকে অনেকেই সরাসরি উস্কানিমূলক বলে উল্লেখ করেছেন, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুফতির ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তও মূলত এই রাজনৈতিক পরিবেশ থেকেই এসেছে।

প্রতিক্রিয়া: ফিলিস্তিনি ও মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ

এই সিদ্ধান্তের পর ফিলিস্তিনি নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের ধর্মীয় মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই নিষেধাজ্ঞা কেবল একজন ধর্মীয় নেতার ওপর নয়, বরং পুরো মুসলিম সমাজের ওপর আঘাত।”

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল আল-আকসার ধর্মীয় চরিত্র ও স্থিতাবস্থার প্রতি অবজ্ঞা দেখাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে বিক্ষোভও শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত: ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ড. ইউসুফ সাবরি বলেন, “ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন। আল-আকসার ওপর হস্তক্ষেপ মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “মুফতির বক্তব্য যদি রাজনৈতিক হয়েও থাকে, তার বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞা বরং পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে।”

ভবিষ্যৎ প্রভাব ও উদ্বেগ

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ক্ষোভকে আরও উসকে দেবে এবং আল-আকসা ঘিরে ভবিষ্যতে সহিংসতার আশঙ্কা বাড়াবে। আল-আকসায় প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা শুধুই একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি বৃহত্তর ধর্মীয় দমননীতির অংশ বলে মনে করছেন অনেকে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, পশ্চিমা বিশ্ব যদি এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে পারে।

এম আর এম – ০৭২৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button