ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজধানীর কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়বে বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা এবং তার আশপাশের অঞ্চল। নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
কোন কোন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে সেগুলো হলো:
- বাংলাদেশ সচিবালয় ও সংলগ্ন এলাকা
- প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা
- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং
- কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং
- অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং
- মিন্টু রোড ক্রসিং
এই এলাকাগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, শোভাযাত্রা বা গণজমায়েত করা যাবে না।
পূর্বের অভিজ্ঞতা ও সিদ্ধান্তের পটভূমি
এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময় কিংবা রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ডিএমপি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে একই এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি, আন্দোলন বা ধর্মঘটের সময় এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রশাসন আগেভাগেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়।
আদেশের আইনি ভিত্তি ও কার্যকারিতা
এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬’-এর ২৯ ধারা অনুযায়ী। এই ধারা অনুযায়ী, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ কমিশনার নির্দিষ্ট এলাকায় জনসমাগম সীমিত বা নিষিদ্ধ করতে পারেন।
এ আদেশ শুক্রবার (৮ আগস্ট) থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ডিএমপি সূত্রে।
নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি
বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দল কর্মসূচি ঘোষণা করছে, রাস্তায় জনসমাগমও বেড়েছে। এ অবস্থায় বিশেষ করে প্রশাসনিক কেন্দ্র ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের আবাসস্থল ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকলে এমন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ স্বাভাবিক। তবে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হলে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে— এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া
এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষক মহল। বিরোধীদলগুলোর অভিযোগ, প্রশাসন সরকারবিরোধী কার্যক্রম ঠেকাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে সরকারি মহল বলছে, এটি একটি নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ, যার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, অতীতে এমন নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল।
নিরাপত্তা বনাম গণতন্ত্র
প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। অন্যদিকে, সভা-সমাবেশ করা একটি সাংবিধানিক অধিকার। তাই প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে আলোচনা থাকবে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে স্বল্পমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী হয়ে উঠতে পারে।
এম আর এম – ০৭২০, Signalbd.com



